ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোনো ধরনের চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিতে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন সংগঠনের সভাপতি আল নাহিয়ান জয়। বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অপপ্রচার।
সংগঠনের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় সোমবার এসব কথা বলেন জয়।
১৯৪৮ সালর ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় ছাত্রলীগের। পাকিস্তান আমলে স্বাধীকার আন্দোলন এবং স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সংগঠনটির ভূমিকা গৌরবের।
তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর নানা নেতিবাচক সংবাদে শিরোনাম হয়ে এসেছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। এ জন্য সংগঠনের সাংগঠনিক নেত্রীর পদ ছাড়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন ত্যক্ত বিরক্ত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।
তবে জয় মনে করেন, নেতিবাচক এসব অভিযোগ অপপ্রচার। তিনি বলেন, ‘আজকে বলা হয় ছাত্রলীগ নাকি টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করে। এই টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি কখনও ছাত্রলীগ করে না।’
ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় অতিথিরা
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে বিধায় একটি পক্ষ আমাদের শত্রু। তারা বিভিন্নভাবে ছাত্রলীগকে দোষারোপ করে। কিন্তু ছাত্রলীগ সব সময় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এতে যদি কারও ঘুম হারাম হয়ে যায়, তার জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত।’
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে একটি মহল ছাত্রলীগকে কলুষিত করার জন্য সব সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এর নির্দিষ্ট কারণও আমাদের জানা আছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর কোনো আঘাত আসলে ছাত্রলীগ তাকে প্রতিহত করতে সংকল্পবদ্ধ।’
বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্ত হন ভার্চুয়ালি। তিনি ছাত্রলীগকে অর্থকরি উপার্জনের বদলে জ্ঞানার্জনে মনযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন।
আলোচনা শুরুর বেশ আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, ওয়ার্ড ও থানা থেকে জড়ো হন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এক পর্যায়ে মিলনায়তনে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
জাতীয় সংগীতে আলোচনা সভা শুরু হয়। সভা মঞ্চে বসেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।
সংগঠনের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় অংশ নেয়া ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীরা
নানা সময় ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, বাহাদুর ব্যাপারী, সভাপতি এনামুল হক শামীম, লিয়াকত শিকদার, মাহমুদ হাসান রিপন, এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাইফুর রহমান সোহাগ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, অসীম কুমার উকিল, সাবেক সভাপতি, ইসহাক আলী খান পান্না, অজয় কর খোকন, নজরুল ইসলাম বাবু, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, এস এম জাকির হোসেন।
আসছে ছাত্রলীগের সাইবার ব্রিগেড
আলোচনায় গুজব প্রতিরোধে সাইবার বিগ্রেড গঠন করার ঘোষণাও দেন ছাত্রলীগ সভাপতি।
জয় বলেন, ‘জামায়াত-শিবির গংরা প্রোপাগান্ডা, গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে আমাদের নেত্রী, বাংলাদেশ ও দেশের উন্নয়ন, ছাত্রলীগকে নিয়ে।
‘ফেসবুকে শত শত ফেইক আইডি খুলে, একই কথা সব জায়গায় কমেন্ট করা হয় আমরা দেখেছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা একটি সাইবার বিগ্রেড তৈরি করব। যার মধ্যে এই গুজবকে প্রতিরোধ করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করে যাবে।’
ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতা যারা সৃষ্টি করে তাদের আমরা এখন মাঠে দেখতে পাই। সেই পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের আমরা দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত আছি। কেউ যদি পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন ছাত্রলীগ তাদের এক বিন্দু ছাড় দেবে না।’
তিনি বলেন, ‘কুচক্রি মহল ছাত্রলীগের জনপ্রিয়তাকে ভয় পায়। তারা জানে যে ছাত্রলীগ মাঠে থাকলে, তারা পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারবে না।’
৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের হাজারো নেতাকর্মীর ভিড়
শেখ হাসিনাকেও তৈরি করেছে ছাত্রলীগ
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকও। তিনি বলেন, ‘আজকে যিনি প্রধানমন্ত্রী, বাংলার গণমানুষের প্রাণপ্রিয় নেত্রী, সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তাকেও সৃষ্টি করেছে ছাত্রলীগ।
‘তিনি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন, রাজনীতি করেছেন, ছাত্রলীগ উনাকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছে। দেশ পরিচালনা শিখিয়েছে। সেই কারণেই শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সমাজে একটি বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের একটি আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে।…এ দেশে মানুষের কল্যাণে যা কিছু হয়েছে তা করেছে ছাত্রলীগ। দেশের মানুষের কল্যাণে ছাত্রলীগ সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে।’