ধন সম্পদের পেছনে না ছুটে জ্ঞানার্জন করতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, সম্পদ কোনো কাজে আসে না, একমাত্র জ্ঞানই কাজে লাগে।
দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ছাত্র সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন শেখ হাসিনা, যার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সংগঠনটি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদ্যা অর্জন করলে জীবনে কখনও হোঁচট খাবে না।...এখন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ তাই বসে না থেকে হাতের কাছে যা পাও পড়ে ফেল। পাঠ্য পুস্তকের পাশাপাশি যত পার জ্ঞানার্জন কর। যতই জ্ঞান অর্জন করবে ততই বড় হবে।’
শেখ হাসিনাকে সাংগঠনিক নেতার স্বীকৃতি দিয়েছে ছাত্রলীগ। আর অভিভাবক হিসেবে তিনি সব সময় সংগঠনটিকে নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও আসে বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছ থেকেই।
করোনাকালে সোমবার ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীটি পালিত হয়েছে অনেকটাই অনাড়ম্বরের সঙ্গে।
সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া দিনটিতে সবচেয়ে বড় আয়োজন বিকেলে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভা।
অন্য বছরগুলোতে এই আলোচনায় বরাবর প্রধান অতিথি হয়ে আসতেন শেখ হাসিনা। কিন্তু করোনাকালে তিনি গণভবন থেকে বের হচ্ছেন না বললেই চলে। তাই এই অনুষ্ঠানেও যুক্ত হন অনলাইনে।
১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলন, ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা উত্তর বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগের ভূমিকা গৌরবের।
তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, সংঘর্ষসহ নানা অপকর্মে নাম এসেছে ছাত্রলীগের। তাদের কর্মকাণ্ডে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে পদ ছাড়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগকে জ্ঞানের পথে আসার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘করোনা আমাদের শিখিয়েছে বাড়ি-গাড়ি কোনো কাজে আসে না। বিদ্যা এমন এক সম্পদ যা কেউ কখনও কেড়ে নিতে পারবে না। জ্ঞান অর্জন করলে জীবনে কখনও হোঁচট খাবে না।’
নিজ এলাকায় নিরক্ষরদের পড়তে-লিখতে শেখাতেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদেরকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘পরিবারে বা প্রতিবেশীদের ঘরে শিক্ষার্থী থাকলে তাদের পড়াশোনাতেও সহযোগিতা কর।
‘ছাত্রলীগের মূলনীতির এক নম্বর হচ্ছে শিক্ষা। এটা মাথায় রেখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পথ চলতে হবে। আদর্শ নিয়ে না চললে জীবনে বড় হতে পারবে না। নিজেদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ কর। ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ধরে রেখেই সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে।’
করোনার সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ভূমিকার প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘করোনার মধ্যে ছাত্রলীগ অনবদ্য ভূমিকা রেখেছে। যখন তাদের যে কথা বলেছি, সব রেখেছে। করোনা আক্রান্তদের ফেলে যেখানে মানুষ চলে যাচ্ছিল, সেখানে আমার ছাত্রলীগের ছেলেরা পাশে দাঁড়িয়েছে।
‘মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার কাজও করেছে ছাত্রলীগ। আমি সত্যিই গর্বিত। যখন ধান কাটা নিয়ে কৃষকরা সংকটে পড়ল, তখন ছাত্রলীগ নেমে পড়ল ধান কাটতে। তারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যে কোনো কাজই ছোট না।’
গৌরবের স্মরণ
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস। বাঙালির ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস। আজ আমরা যে বাংলাদেশ পেয়েছি এর প্রতিটি সংগ্রামে কিন্তু ছিল ছাত্রলীগ। বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ গড়ে তোলেন।
‘এদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছাত্রলীগ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ যে কোনো সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি রক্ত দিয়েছে ছাত্রলীগ।’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরের পরিস্থিতি বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর, জিয়া যখন রাষ্ট্রপতি হলো, তার প্রথম কাজ ছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করা। প্রথমে প্রলোভন দিয়ে দলে টানা, আর না হলে চলত হত্যা-নির্যাতন। অনেকের লাশও আত্মীয়রা পায়নি।’
বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ, উন্নত জীবন দিতে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের জন্যই তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
ডিজিটাল বাংলাদেশ করা, ইউনিয়ন পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড লাইন স্থাপন, করোনার মতো কঠিন সময়ে সারাদেশে বই বিতরণ, উপজেলায় কারিগরি শিক্ষা চালুর কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
বলেন, ‘বিশ্ব যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে আমরা পিছিয়ে থাকব কেন? চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে।’
কৃষির পাশাপাশি শিল্পায়নেও বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরকারে আসার পর বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এর পেছনের লক্ষ্য একটাই, কর্মসংস্থান।
‘আমাদের রেমিট্যান্স বাড়ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও আমরা অনেকটাই বাড়াতে পেরেছি।’
কয়েকটি গণমাধ্যমের সমালোচনাও করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কিছু পত্রিকা আছে, যতো ভালো কাজই করো, তা কখনও লেখে না। অথচ কোথাও একটু খুঁত পেলে সেটা বড় করে ধরে। এটা তাদের মানসিক দৈন্যতা।’