ওয়াজ মাহফিলে যে ভাষায় কথা বলা হয়, তাতে ধর্মীয় বক্তাদের সম্মান থাকে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেছেন, একজন প্রকাশ্যেই আরেকজনকে ভণ্ড, প্রতারক বলেন।
সোমবার রাজধানীতে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিজয় দিবসের আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
হেফাজত নেতাদের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আমরা শুধু আলেমদেরই নয়, যে কোনো গুরুজনদেরই সম্মান করি। কিন্তু ওয়াজেরে নামে আপনারা (হেফাজত) যে ভাষায় কথা বলেন তাতে কি আপনাদের সম্মান থাকছে?
‘যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা করে, প্রকাশ্যে যখন একজন আলেম আরেক আলেমকে ভণ্ড বা প্রতারক দাবি করেন তখন কি সম্মান থাকার কথা?’
‘স্বাধীনতা, সংবিধান ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে আপস নয়’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধীদের তীব্র সমালোচনাও করেন হানিফ। বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী ও ভাস্কর্যবিরোধীরা এখন একটি ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাতার নাম হেফাজতে ইসলাম। ধর্মের নামে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী তাদের কোনো কার্যক্রম বরদাস্ত করা হবে না।’
স্বাধীনতার ৫০ বছরের প্রাক্কালে নতুন করে ইতিহাস নিয়ে আলোচনা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের আস্ফালন দু:খজনক বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ নেতা।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিজয় দিবসের আলোচনায় মাহবুবউল আলম হানিফ
এদেশের স্বাধীনতা কারও দয়ায় আসেনি উল্লেখ করে হানিফ বলেন, ‘৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা, সংবিধানের চারনীতি ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আওয়ামী লীগ কোনো আপোষ করবে না।’
ভাস্কর্যবিরোধীদের দাবি খণ্ডন করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন,‘অনেক মুসলিম দেশেই ভাস্কর্য রয়েছে। ভাস্কর্য ইসলাম বিরোধী হলে সেসব দেশে কখনোই ভাস্কর্য তৈরি করা হতো না। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে তারা ধর্মের অপব্যাখ্যা করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
‘বিএনপির সময় আপনারা কোথায় ছিলেন?’
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন নিয়ে ৪২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির অভিযোগ এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিকার চেয়ে চিঠির সমালোচনাও করেন হানিফ।
বলেন, ‘সুশীল সমাজ যে বিবৃতি দিয়েছে তা একটি গভীর ষড়যন্ত্র বলেই জাতি মনে করে। নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতা থাকতে পারে, সেগুলো নিয়ে কথা হতেই পারে কিন্তু সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে বিচারের দাবির পেছনে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছ।’
হানিফ বলেন, ‘বিএনপি যখন ভোট ডাকাতির মহোৎসব করেছে, তখন আপনাদের বিবেক কোথায় ছিল? আমরা আপনাদের সম্মান করি। আপনারা পরামর্শ দিন কীভাবে সব কিছু ভালোভাবে করা যায়। কিন্তু অযৌক্তিক দাবি তুলবেন না।’
‘হেফাজতের সাথে সমঝোতার খবর অপপ্রচার’
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দীন নাছিমও। তিনি বলেন,‘অনেকে বলেন, আওয়ামী লীগ হেফাজতের সাথে সমঝোতা করেছে। এটাও এক ধরনের অপপ্রচার। এটা একটি ষড়যন্ত্র। যারা আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়, শেখ হাসিনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তারাই এটি ছড়াচ্ছে।’
নাছিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ধর্ম নিরপক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে। এ নিয়ে কারো দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কোনো সুযোগ নেই।
‘ধর্ম ব্যবসায়ীদের মুল উৎপাটন না করলে তারা স্বাধীনতার সব অর্জন ম্লান করে দেবে। তাদের সুযোগ দেয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।’