বিএনপিতে কোনো বিভেদ নেই, দলের ঐক্যে কোনো প্রশ্ন নেই- দাবি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দুই ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করাটি ফখরুলের বিবেচনায় ‘কোনো ব্যাপার নয়।’
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে না জানিয়ে সরকার পতনের বিক্ষোভের ডাক দেয়া নিয়ে বিএনপিতে নানা ঘটনার বিষয়ে দলের মহাসচিব বলেন, ‘এটাকে এতো বড় করে যারা দেখছেন তারা আমার মনে হয় ঠিকভাবে দেখছেন না।’
সোমবার দলের পক্ষ থেকে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে দুই ভাইস চেয়ারম্যানকে নোটিশ এবং দলে ভাঙন আতঙ্ক নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন ফখরুল।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ্ই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন,‘বিএনপি এখনো অত্যন্ত সুসংগঠিত। একটা কথা আপনাদের মনে রাখতে হবে বিএনপি একটা বৃহৎ দল। এই ধরনের উদারপন্থি, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলে ছোট-খাটো দুই একটা ঘটনা কোনো ঘটনাই নয়।’
গত ১৪ ডিসেম্বর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে না জানিয়ে সরকার পতনের ডাকে দলের একটি অংশের রাজপথে নামার পর বিএনপির ভেতরে চক্রান্ত হচ্ছে কি না, এ নিয়ে দলে প্রশ্ন উঠে
গত ১৪ ডিসেম্বর বিএনপির বেশ কিছু কর্মী রাজধানীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হয়ে সরকার পতনের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। অথচ দলের এই ধরনের আন্দোলনে নামার কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না।
- আরও পড়ুন: বিএনপিতে ভাঙনের আতঙ্ক
নেতা-কর্মীরা মাঠে নামার পর বিএনপি খোঁজ নিতে থাকে, এর পেছনে কারা। সেই সঙ্গে তাদেরকে রাস্তা থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশ আসে।
এর মধ্যে বিএনপির দুই ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। হাফিজ ১৯ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, তিনি বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। দলের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান কখনও ছিল না তার।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান সবাই দলে আছেন। কোথাও যাওয়ার কোনো সমস্যা তো হয়নি। সেই ধরনের কোনো পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি, সেই ধরনের কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি।’
আরও পড়ুন: বিএনপির ভাঙন আমি ঠেকিয়েছি: হাফিজ
হাফিজের দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘উনার বিষয়ে আমরা কি পাল্টা কিছু বলেছি? উনার বক্তব্যে উনি যা বলেছেন, তা আমি দেখেছি। দলের যে বিধান আছে, স্থায়ী কমিটির …।’
‘একটা রাজনৈতিক দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতা নিঃসন্দেহে এই বিষয়টি প্রেসের কাছে আসবেই, আপনারা কনসার্ন হবেন।’
দলে শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ এনে করা নোটিশের জবাবে গত ১৯ ডিসেম্বর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তিনি বিএনপিকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন
হাফিজ কি বহিষ্কার হচ্ছেন?-এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘ভারতে ২২ জন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা ওপেন চিঠি দিয়েছেন সোনিয়া গান্ধিকে। কই তারা তো কেউ বহিষ্কার হননি। দ্যাট ইজ দ্যা প্র্যাকটিস অব ডেমোক্রেটিক পার্টি। কখনও হবে, কখনও হবে না-এটা নিয়ে এতো মাথাব্যাথার কোনো কারণ নেই।’
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তুলেছেন, সেগুলো নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা এখনও আলোচনা করিনি এবং কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তার আগে আপনারা এমন লাফালাফি করছে মনে হয় যেন সব কিছু চলে যাচ্ছে, এটাতেই গণতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে।’
হাফিজ অভিযোগ করেন, বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। তার এই বক্তব্য তুলে ধরে আবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সস্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করে।
- আরও পড়ুন: বিএনপির হঠাৎ বিক্ষোভ, নেপথ্যে কে?
এ বিষয়ে ফখরুল বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) মেজর হাফিজের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছে, তারা তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা করেছে, তারা তার বিরুদ্ধে বাস-ট্রাক পুড়িয়ে দেয়ার মামলা করেছে। একটা নয় ১০টা মামলা। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মুখে মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কথা বলা শোভা পায় না।’
‘কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে তারা সন্মান দিয়েছেন? তারা কি জিয়াউর রহমানকে সন্মান দিয়েছেন? তারা কি তাজউদ্দিন আহমদ সাহেবকে সন্মান দিয়েছেন? তারা দেননি। তারা কি এমএজি ওসমানি (মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি) এর নাম একবারও স্মরণ করেন?
‘এ কে খন্দকার সাহেবকে বের করে দিয়েছেন, এখন উনি মুখ-বধির হয়ে গেছেন, একেবারে কথা বলা বন্ধ, চলাফেরা বন্ধ হয়ে গেছে উনার। এটা আমি কয়েকটা বললাম। আমরাও তো মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। আমাদের বিরুদ্ধে ৮৬টা মামলা।’
আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন
হাফিজ উদ্দিন ও শওকত মাহমুদকে নোটিশ করা নিয়ে আওয়ামী লীগের বক্তব্যকে অযাচিত মনে করছেন ফখরুল।
ফখরুল বলেন, ‘আমার খুব দুঃখ হয় যখন দেখি যে, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বলছেন যে, বিএনপির মধ্যে গণতন্ত্র নেই, তারই এটা প্রমাণ। ভুতের মুখে রাম রাম।
‘আপনারা (আওয়ামী লীগ) দেশের গণতন্ত্রই খেয়ে ফেলেছেন, মানুষের অধিকারগুলো খেয়ে ফেলেছেন। আর আপনার অন্যের গণতন্ত্র দেখে বেড়াচ্ছেন।’
বিএনপি নেতার দাবি, গণতন্ত্র আছে বলেই তো বিএনপি এখন পর্যন্ত এতো অটুট আছে।