বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শোকজ নোটিশে আমার নামের বানানেই ভুল: হাফিজ

  •    
  • ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৮:৫১

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি বিগত ২৯ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি সাথে সংশ্লিষ্ট, আমার যোগদানের তারিখ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাবার তারিখ, আমার নামের বানানসহ অনেক ভুলই রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে দৃশ্যমান।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে দায়িত্বপালনে ব্যর্থতা ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ ১১টি অভিযোগ আনা হয়েছে।

তবে এর সবগুলোই প্রত্যাখান করে হাফিজ বলছেন, এগুলো সব কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

অভিযোগের কারণ ব্যাখ্যার জন্য বিএনপির পাঠানো নোটিশের ভাষা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেছেন, ওই নোটিশে তার নামের বানান পর্যন্ত ভুল।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বনানীতে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ।

হাফিজ উদ্দিন আহমদকে বিএনপির পক্ষ থেকে পাঠানো নোটিশের একটি অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা। এতে দেখা গেছে তার নামের ক্ষেত্রে ভুল করে ‘উদ্দীন’ এবং ‘আহমেদ’ লেখা হয়েছে।

কারণ দর্শানোর নোটিশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমি একজন যুদ্ধাহত, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। বিজয়ের মাসে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে অসৌজন্যমূলক ভাষায় অসত্য অভিযোগ সম্বলিত কারণ দর্শানোর চিঠি পেয়ে হতবাক হয়েছি।

‘আমি বিগত ২৯ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি সাথে সংশ্লিষ্ট, আমার যোগদানের তারিখ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাবার তারিখ, আমার নামের বানানসহ অনেক ভুলই রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে দৃশ্যমান।’

যুগ্ম মহাসচিবের পক্ষ থেকে ভাইস চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর তীব্র সমালোচনা করেন হাফিজ।

তিনি বলেন, ‘আমি বিগত ২২ বছর ধরে দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছি। দলের ভাইস চেয়ারম্যানকে একজন যুগ্ম মহাসচিবের পক্ষ থেকে এমন কঠিন, আক্রমণাত্মক ভাষায় কৈফিয়ত তলবে অত্যন্ত অপমানিত বোধ করছি।

‘এখানে প্রটোকল ও সৌজন্যের ব্যত্যয় ঘটেছে। ব্যক্তি রুহুল কবির রিজভী একজন নিষ্ঠাবান ও ত্যাগী নেতা, তার সাথে আমার সু-সম্পর্ক রয়েছে, তার কাছ থেকে এ ধরনের চিঠি আশা করিনি।’

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদকে পাঠানো বিএনপির শোকজ নোটিশ

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন হাফিজ।

১. সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনে অপারগতার অভিযোগের জবাবে তিনি জানান, তাকে কখনও বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের দায়িত্ব দেয়া হয়নি।

২. জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক পদের প্রস্তাব না নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অসুস্থতার জন্য এই অফার আমি গ্রহণ করতে পারিনি। আমার বর্তমান বয়স ৭৬ বছর ২ মাস, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি বা স্থায়ী কমিটিতে আমার চাইতে বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা চার-এর অধিক হবে না বলেই আমার ধারণা। এই বয়সে মানুষ অসুস্থ হতেই পারে।’

৩. বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত সভায় যোগ না দেয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘যোগদানের পূর্বেই পুলিশ আমাকে ঢাকা বিমান বন্দরে গ্রেফতার করে, এ কারণেই বরিশালে যেতে পারিনি। আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল বর্তমান সরকার। বিএনপির কোনো সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের মারাত্মক অভিযোগ দায়ের করার কথা আমার জানা নেই। এ মামলা ছাড়াও এক ডজন মামলায় আমি গত ১০ বছর ধরে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যাচ্ছি।’

৪, ৫ ও ৬. দলীয় সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সম্পর্কে মিথ্যা ও অসৌজন্যমূলক মন্তব্য করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অতীতে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত স্মরণীয় দিবসে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হতো, গত দেড় বছরে এ ধরনের অনুষ্ঠানে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আমাকে ডাকার প্রয়োজন বোধ করেননি। বোঝাই যাচ্ছে বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধাদের কোণঠাসা করে রাখার জন্য একটি মহল সক্রিয় রয়েছে।

বিগত এক বছরে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ছয়টি সভায় অংশগ্রহণ করেছি। এসব সভায় আমি অসৎ উদ্দেশ্যে বিএনপির সমালোচনা করেছি- এমন অভিযোগ করা হয়েছে, যা একেবারেই অসত্য, ঢালাও মন্তব্য।’

কয়েকটি বক্তব্যের উদাহরণ দিয়ে হাফিজ বলেন, ‘এসব বক্তব্য দলীয় সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সম্পর্কে মিথ্যা ও অসৌজন্যমূলক নয়, বরং আমি আত্মসমালোচনা করেছি। ’

সেই বক্তব্যগুলো হলো:

‘জনগণ মনে করে, যে নির্বাচনে (২০১৪) বিএনপির অংশগ্রহণ করা উচিত ছিল সেটা তারা বর্জন করেছে, আর যে নির্বাচনে (২০১৮) অংশগ্রহণ নিরর্থক সেটিতে অংশ নিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বৈধতা দিয়েছে।

‘২০১৮ সালের নির্বাচনের পর মাত্র পাঁচ সদস্য নিয়ে বিএনপির সংসদে যোগ দেয়া উচিত হয়নি।

‘বেগম খালেদা জিয়া দু-বছর ধরে কারাগারে অন্তরীণ, অথচ বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল তার মুক্তির জন্য কোনো কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি।

‘বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুটি প্রধান দলেই গণতন্ত্রের চর্চা নেই।’

৭. প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় দলীয় স্বার্থ ও শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে হাফিজ বলেন, ‘আমি ৩৪ বছর যাবৎ রাজনীতি করছি, কখনও কারও বিরুদ্ধে- এমনকি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্য রাখিনি। অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধেও অনেক বক্তব্য রেখেছি, কিন্তু আমি কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি।’

হাফিজ বলেন, ‘আমি কখনওই বেগম খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান সম্পর্কে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য রাখিনি। এ ধরনের ঢালাও অভিযোগ এনে আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলে মনে করি। আমি আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচনা করি, কিন্তু কাউকে ব্যক্তিগতভাবে অ্যাটাক করি না, এটা আমার ন্যাচারে নেই। এরশাদকে লম্পট, স্বৈরাচার বলে নানান বক্তব্য দেয়া হয়, আমি কোনোদিন এমন আচরণ করিনি। তাহলে নিজ দলীয়দের বিরুদ্ধে কীভাবে করব?’

৮. ‘হাফিজ নিজেকে মহাসচিব ঘোষণা করেছেন’- এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে ১৩ বছর আগের জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমি একজন নগণ্য রাজনৈতিক কর্মী, নিজেকে মহাসচিব ঘোষণা করেছি এটি একটি হাস্যকর বক্তব্য।

‘২৯ অক্টোবর ক্ষমতার করিডোরে অবস্থানকারী সেনা কর্মকর্তারা স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যকে জোরপূর্বক সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের বাসায় নিয়ে যান। গভীর রাতে সেখানে অনুষ্ঠিত সভায় জনাব সাইফুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আমাকে অস্থায়ী মহাসচিব রূপে ঘোষণা করা হয়। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না, পরদিন বিষয়টি আমাকে জানানো হয়।

‘সেনা সদস্যরা কয়েকদিন পরেই আবদুল মান্নান ভূইয়াকে জেলে ঢোকায় এবং সাইফুর রহমান গোপনে দেশত্যাগ করেন। সে সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে, নেতাদের উপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়। কারও কারও কাছ থেকে ভবিষ্যতে রাজনীতি করব না- এই মর্মে মুচলেকাও আদায় করা হয়।’

বিএনপিকে সে সময় ভাঙনের হাত থেকে 'রক্ষা করেছেন' দাবি করে হাফিজ বলেন, ‘বিএনপিকে দ্বিখণ্ডিত করার চেষ্টা আমি কখনও করিনি বরং দলকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেছি। আমার অনুরোধে বিতর্কিত সেনা কর্মকর্তারা বিএনপির ১০৫ জন এমপিকে ফেরদৌস কোরাইশির নেতৃত্বাধীন কিংস পার্টিতেন যোগদান থেকে বিরত রাখেন। তারা আজও বিএনপিতে আছেন।

‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার আইনজীবী নওশাদ জমিরের মাধ্যমে সকলকে ঐক্যবন্ধ রাখার জন্য আমার কাছে নির্দেশ পাঠান। সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার তার বাসভবনে আমাকে ও মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে বৈঠকে উপস্থিত হবার জন্য অনুরোধ করেন। আমি তাৎক্ষণিক উপস্থিত হই, কিন্তু দেলোয়ার সাহেব আসেননি।

‘পরবর্তী সপ্তাহে এমপি হোস্টেলে বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব শাহজাহানের বাসায় খন্দকার দেলোয়ারের সাথে দেড় ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠকের পর আমাদের ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়। মহাসচিব আমাকে সেনা কর্তৃপক্ষের সাথে দেনদরবার করে বিএনপিকে ক্ষমতায় নেবার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলেন। পরবর্তীকালে আমি বিভিন্ন সাংবাদিক সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়া ও খন্দকার দেলোয়ারের নেতৃত্বে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বলে বক্তব্য রাখি।’

৯. দলে সংস্কারপন্থির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়া কারামুক্ত হবার পর আমি তার সাথে দেখা করি। জেলখানা থেকে পাঠানো তার সকল নির্দেশ পালন করেছি জানালে তিনি আমার প্রতি সদয় আচরণ করেন। আমার কার্যক্রম পর্যালোচনা করেই তিনি আমাকে ২০০৮, ২০১০ এর উপনির্বাচন, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেন।’

হাফিজ বলেন, ‘সংস্কার ভালো জিনিস। দলের স্বার্থ রক্ষাতেই সংস্কার জরুরি, কিন্তু আমি কখনওই খালেদা জিয়াকে মাইনাস করে দল করতে চাইনি। তখনও চাইনি, এখনও চাই না। ’

১০. নিজের নির্বাচনি এলাকায় বিএনপির কর্মীকে নাজেহাল ও দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় রাখার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর কতিপয় বিএনপি কর্মী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের সঙ্গে আঁতাত করে বিএনপি কর্মীদের উপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে। বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি লালমোহন ও তজুমুদ্দিন থানায় দুইজন নেতাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য বহিষ্কার করে। এদের একজন রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষর জাল করে চিঠি ইস্যুর কারণে বহিষ্কৃত হয়। ’

১১. নির্বাচনি এলাকায় গ্রুপিং সৃষ্টির অভিযোগও নাকচ করেন হাফিজ। তিনি দাবি করেন, সেখানে দলের মূল কমিটি এবং সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলো গঠনতন্ত্র মেনে কাউন্সিলরদের ভোটে গঠন করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ উদ্দিন আহমদের বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও অভিযোগ কেউ তুলতে পারেনি। বর্ষীয়ান এই নেতা বলেন, ‘ঢাকায় আমার নিজের কোনো বাড়ি নেই। যেটাতে আছি তা আমার বাবার, পারিবারিক ভাগাভাগিতে তা পেয়েছি। বিএনপির এমন অনেক নেতাকর্মী আছেন যাদের ১০০ এর বেশি বাড়ি রয়েছে ঢাকা শহরে।’

হাফিজ উদ্দিনের আহমদের পাল্টা অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি শোকজ নোটিশে সই করা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে নিউজবাংলার প্রতিবেদককে তিনি বলে, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। ’

হাফিজ উদ্দিনের অভিযোগের বিস্তারিত শোনাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক বছর ধরে রাজনীতি করছি, তাই বুঝতে পারি সাংবাদিকেরা কী প্রশ্ন করতে পারে। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে রাজি না।’

এ বিভাগের আরো খবর