সংগঠন বিরোধী সব অভিযোগ প্রত্যাখান করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ পাল্টা দাবি করেছেন তার কারণেই বিএনপি ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।
তিনি বলেন, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপিতে ভাঙন ঠেকাতে তৎপর হয়েছিলেন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বনানীতে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন বিএনপির বর্ষীয়ান এই নেতা।
দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডসহ ১১টি অভিযোগ এনে গত ১৫ ডিসেম্বর হাফিজ ও বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয়া হয়েছিল।
সব অভিযোগ নাকচ করে হাফিজ বলেন, ‘বরাবর-ই আমি বিএনপিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেছি। জেল থেকে বেগম জিয়া নির্দেশনা দিয়েছিলেন দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার। আমি সেটিও করেছি। কিন্তু তারাই (দলের একাংশ) আমার বিরুদ্ধে এখন ভাঙনের অভিযোগ আনছেন, বলছেন আমি না কি সংস্কারপন্থি।’
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপিতে যে ভাঙন ধরেছিল, আবারও তেমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে কি না বেশ কিছু দিন ধরে চলছে এমন গুঞ্জন।
সম্প্রতি এর নমুনাও দেখা গেছে। ১৫ ডিসেম্বর কেন্দ্রের অনুমতি না নিয়েই সরকার পতনের ডাক দিয়েছিল বিএনপির একাংশ। রাজধানীর জিরো পয়েন্টের এই সমাবেশে সরাসরি অংশ নেন শওকত মাহমুদ।
তাতে ছিলেন বিএনপি জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহীম। সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ছিলেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম ভুঁইয়া।
সম্প্রতি রাজধানীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় সরকার পতনের ডাক দিয়ে বিক্ষোভ হয় বিএনপির নামে। তবে দলের পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত ছিল না।
সরাসরি অংশ না নিলেও ওই সময় পাশেই জাতীয় প্রেস ক্লাবে অবস্থান করছিলেন হাফিজ উদ্দিন। এক আলোচনা সভায় নানা ইস্যুতে বিএনপির অবস্থানের সমালোচনা করে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। পরে সভা শেষে সেখানে থাকা নেতা কর্মীরা জিরো পয়েন্টে সরকার পতনের আন্দোলনে যোগ দেন।
জ্যেষ্ঠ দুই নেতার এমন কাণ্ডে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে বিএনপির হাই-কমান্ডে। দলটির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাই-কমান্ডের সন্দেহ, দলে কেউ কেউ ষড়যন্ত্র করছেন। দল ভাঙার চেষ্টা করছেন। আলটিমেটলি দলকে বিপদে ফেলতে চাচ্ছেন।’
এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘কিন্তু আমি কখনও বেগম জিয়াকে মাইনাস করতে চাইনি। তখনও (ওয়ান ইলেভেনের সময়ে) চাইনি, এখনও চাই না।’
তবে দলীয় সংস্কার ভালো কাজ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দলের নীতি ও লক্ষ্য নিশ্চিত রেখে দলকে রক্ষা করার জন্যই সংস্কারের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।’
কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন বলে জানান হাফিজ। এ ব্যাপারে নিজের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করছি না। আমি যে ব্যাখ্যা দিয়েছি সেটি কীভাবে তারা নেয় তা দেখতে চাই।
‘যদিও ভেবেছিলাম পদত্যাগ করব, আমার সাবেক কলিগ, বন্ধুরা বলেছিলেন পদত্যাগ করতে। কিন্তু আমার যারা নেতাকর্মী তারা আমাকে অনুরোধ করেছেন যাতে পদত্যাগ না করি। তাদের অনুরোধেই আমি পদত্যাগ করলাম না।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবে ১৫ ডিসেম্বরের আলোচনা সভায় ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ এবং পাঁচ জন সদস্য নিয়ে সংসদে যাওয়ার সমালোচনা করেছিলেন হাফিজ। এ ছাড়া খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন বলেও তাকে দেয়া কারণ দর্শানো নোটিশে বলা হয়েছে।
ওই সভায় জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিই তুলে ধরেছিলেন জানিয়ে ৭৭ বছর বয়সী হাফিজ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ দলের কোনো নেতার বিরুদ্ধে আমি কখনও কটূক্তি করিনি। কারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ আমার ন্যাচারে নাই।’