জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ইস্যুতে বিচারকদের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করাটা দেশের জন্য অশনি সংকেত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী৷
মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে শনিবার মানববন্ধন করেন চট্টগ্রামের ১০০ বিচারক।
এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, সংবিধানের কথা বলে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ, এমনকি বিচারকরাও রাজপথে নেমে এসেছেন, যা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা দেশের জন্য অশনি সংকেত। রাজপথে সরকার ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এমন ভূমিকা দেখে জনগণ ভীত-সন্ত্রস্ত, আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ।
‘নাগরিক সমাজে বিদ্যমান নানা পক্ষের মানুষ বিবাদ-মীমাংসার জন্য আদালত ও প্রশাসনেরই শরণাপন্ন হয়। তারাই যদি কোনো এক পক্ষ নিয়ে রাস্তায় নামে, তাহলে অন্য পক্ষের কথা কে শুনবে? তাহলে ন্যায়বিচার বলে তো কিছু থাকবে না।’
বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘হানিফ সাহেবরা ভোটরঙ্গ করে শেখ হাসিনাকে কেন আজীবন ক্ষমতায় রাখতে চান. তা খুব ভালো করে জানে দেশের প্রতিটি মানুষ। আওয়ামী লীগ এত দুর্নীতি, খুন, গুম, হত্যা, অপকর্ম করেছে যে, তারা ক্ষমতা ছাড়তে ভয় পাচ্ছে। আতঙ্কে প্রহর কাটছে তাদের।
‘ক্ষমতা থেকে চলে গেলে এ দেশের মানুষ তাদের বিচার করবে। এই বিচারের ভয়ে কৌশল করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখছে। এ ছাড়া ক্ষমতা থেকে চলে গেলে লুটপাট-অপকর্ম বন্ধ হয়ে যাবে।’
সরকারের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, ‘নিজেদের অপকর্মে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ভোটারদের ওপর তারা বিশ্বাস রাখতে পারছে না। এখন একনায়কতন্ত্র কায়েম করে গায়ের জোরে আজীবন ক্ষমতায় থাকার খোয়াব দেখতে শুরু করেছে।’
রিজভী বলেন, ‘তারা উপলব্ধি করছে তাদের পায়ের তলে মাটি নেই। ক্রমশ গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে তারা। যুগে যুগে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত পতিত স্বৈরশাসকদের প্রেতাত্মা ভর করেছে এই ভোট ডাকাত সরকারের ঘাড়ে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগের বৈঠকে হানিফ বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা যতদিন শারীরিকভাবে সক্ষম থাকবেন, ততদিন তিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকবেন।’ তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন শেখ হাসিনা’। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ’শেখ হাসিনা আমৃত্যু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন’।
এ তিনটি বক্তব্য তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘আমরা মনে করি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদে থেকে তাদের এই বক্তব্য অসাংবিধানিক ও সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। একদলীয় বাকশাল কায়েম যে যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, উল্লিখিত বক্তব্যগুলো সেটিরই প্রতিফলন।’
তিনি বলেন, ‘এরা (আওয়ামীলীগ) বিরোধী দলে থাকলে গণতন্ত্রের বুলি কপচায়। আর ক্ষমতায় এসে প্রথমেই গণতন্ত্রের ঘাড় মটকে দেয়।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, “...শেখ হাসিনা ব্যর্থ হতে চান না। আমৃত্যু রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখার হীন মনোবাসনা পূর্ণ করার জন্য তিনি এখন বাংলাদেশে ‘মাদার অফ অটোক্র্যাটে’ পরিণত হয়েছেন। আর সে জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সুপরিকল্পিতভাবে নিঃশেষ করার জন্য বন্দি করে রাখা হয়। একটি পাপেট তথাকথিত নির্বাচন কমিশন তৈরি করে তাদের দিয়ে ভোটের নামে রং-তামাশার নির্বাচন হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ভাগে-যোগে দেশটাকে লুটেপুটে নিয়ে কানাডায় বেগমপাড়া, আমেরিকায় সাহেবপল্লী, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, লন্ডন, ইউরোপ, দুবাইতে তাদের অর্থ পাচার বন্ধ হয়ে যাবে। ওরা জানে শেখ হাসিনা যতদিন থাকবে, ততদিন অবাধে লুটপাট করা যাবে। তাই যেকোনো উপায়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে চায়।’
এ সময় তিনি হুঁশিয়ার দিয়ে বলেন, ‘তাদের স্মরণ রাখা উচিত ইতিহাস কখনো তামাদি হয় না। জীবিত অবস্থায় বিচার না হলেও জনগণের অধিকার খর্ব করার জন্য দেশে দেশে স্বৈরাচারের মরণোত্তর বিচার হয়ে আসছে।’
বক্তব্যে হিটলার ও মুসোলিনির পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা-শক্তি-বন্দুক-আইন-আদালত সবকিছু নিজেদের মতো করে জবর দখলে রেখে সরকার, প্রশাসন আর ক্ষমতাসীন দল সব এখন মিলেমিশে একাকার। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এমন ক্ষমতা হিটলার ও মুসোলিনিরও ছিল। কিন্তু ইতিহাসে তারা এখন নিষিদ্ধ নাম।’