রোহিঙ্গাদেরকে কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করায় সংকট তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি নেতার ধারণা, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিগুলোর ‘না’ উপেক্ষা করে এই স্থানান্তরের ফলে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দাবি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সোমবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ এককভাবে বাংলাদেশ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু করে সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে নাখোশ করেছে।’
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের মুখে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। দেশে আগে থেকেই ছিল কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন কক্সবাজারে বিভিন্ন শিবিরে অবস্থান করছে।
একাধিকবার চুক্তি করেও মিয়ানমার তার নাগরিকদেরকে ফিরিয়ে নেয়নি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে সরকার এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করতে চায়। এ জন্য সেখানে উন্নতমানের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আয়বর্ধন প্রকল্পও নেয়া হয়েছে সেখানে।
গত ৩ ডিসেম্বর এক হাজার ৬৪২ জনের একটি দলকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। যদিও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী এর বিরোধিতা করেছে। যদিও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রোহিঙ্গা নিয়ে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছ থেকে সরকার ‘লিপ সার্ভিস’ ছাড়া কিছুই পায়নি।
ফখরুলের অভিযোগ, রোহিঙ্গা সমস্যাকে সরকার আন্তর্জাতিকীকরণ করতে পারেনি। এটা সরকারের চরম ব্যর্থতা। ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের একক সমস্যা নয় জানিয়ে বিএনপি নেতা জাতিসংঘতকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান।
ভাসানচর প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। বলেন, ‘এই প্রকল্পটি বর্তমান আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত একটি মেগা প্রজেক্ট। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য প্রকল্পটিতে প্রাথমিকভাবে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য প্রজেক্টের ন্যায় ব্যয় বৃদ্ধি করে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়।’
কিছু ‘দলকানা সাংবাদিক’ দিয়ে ভাসানচরের আশ্রয় শিবিরের পক্ষে নানা ধরনের প্রচার প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। বলেন, ‘ভাবখানা এমন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে প্রেরণ করাই যেনো সংকট সমাধানে সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এটাই যেন প্রত্যাবাসন।’
দেশে গণতন্ত্র নেই দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, এ জন্যই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘সবার আগে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। তাহলেই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য নির্বাচিত সরকার আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।’
আন্তর্জাতিক মহলকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নৈতিক ও যৌক্তিক ভূমিকায় এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান বিএনপি নেতা।