সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে অবশেষে পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে এর প্রশংসা বা সমালোচনা কোনোটিই করলেন না তিনি।
কেবল একটি মন্তব্যই উঠে এল বিএনপি নেতার মুখ থেকে। বললেন, ‘তারা যেন পৈতৃক সম্পত্তি দিয়ে সেতু বানাইছেন।’
২০১১ সালে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু প্রকল্পটির ঋণচুক্তি করার পর বিশ্বব্যাংক দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তোলার পর সমালোচনায় মুখর ছিল বিএনপি। তবে ২০১৭ সালে কানাডা আদালত দুর্নীতি চেষ্টা অভিযোগকে ‘কাল্পনিক’ ও ‘গালগপ্প’ বলে উড়িয়ে দেয়ার পর থেকে বিএনপি বিষয়টি নিয়ে চুপ।
গত ১০ ডিসেম্বর সব শেষ স্প্যানটি বসানোর পর সেতুর পুরোটাই দৃশ্যমান হওয়ার পর এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়াই আসেনি দলটির পক্ষ থেকে। আর এ জন্য সরকারি দলের আক্রমণের মুখেও পড়তে হচ্ছে তাদের।
সোমবার দলের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদেরকে ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে ফখরুলের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা পদ্মা সেতু নিয়ে প্রশ্ন রাখেন।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘তারা যেন পৈতৃক সম্পত্তি দিয়ে সেতু বানাইছেন। এক জন (তথ্যমন্ত্রী) বলতেছেন, বিএনপি ওপর দিয়ে যাবে নাকি নিচ দিয়ে। হেহ...এজ ইফ তার সম্পত্তি এটা। অথচ মানুষের পকেট কেটে কেটে যে নিচ্ছে তার হিসাব নেই। প্রতিনিয়ত ট্যাক্স নিচ্ছে, এক টাকার জায়গায় ১০ টাকা।’
গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক কর্মসূচিতে বলেছিলেন, ‘পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না। অনেক রিস্ক আছে।’
এর প্রতিক্রিয়ায় সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক আলোচনায় বলেন, খালেদা জিয়ার ভালো চাইলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যেন পদ্মা সেতুতে না উঠেন।
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, বিএনপি উন্নয়নের পক্ষে না। সেজন্য পদ্মা সেতু নিয়ে সমালোচনা করে এসেছে তারা।
জবাবে ফখরুল বলেন, ‘উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করেছে বিএনপি নিজেই৷ বিএনপি বরাবর উন্নয়নের পক্ষে ছিল। ১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমান অর্থনৈতিক সংস্কারের কাজ শুরু করে দেয়। সেটার ওপরই আজকের বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন বলতে দুইটা সড়ক সেতু না। উন্নয়ন হয় মানুষের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে।’
ফখরুলের দাবি, ‘বিএনপি পজিটিভ রাজনীতি করে, নেগেটিভ রাজনীতিতে বিশ্বাসী না। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলে। আর এটা বলতে গেলেই তাদের (আওয়ামী লীগ) গায়ে জ্বালা ধরে যায়।…তারা শুধু দেখেন মুনাফা৷ মুনাফার জন্যই সব মেগা প্রজেক্ট করতেছেন৷’
দেশে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘তাদের (আওয়ামী লীগ) দলের লোকেরা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। কোটি কোটি টাকা পাচার করছে। বাড়িঘর বানাচ্ছে।'
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক তোলপাড় হলেও বিএনপি কেন এ বিষয়ে চুপ, সে প্রশ্নও রাখা হয় ফখরুলের কাছে। তবে এর সরাসরি জবাব দেননি তিনি।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন চ্যালেঞ্জ হলো দেশের মানুষের জীবন রক্ষা করা, ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা, যারা করোনায় আক্রান্ত তাদের চিকিৎসা দেয়া। আরেকটি হলো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা।’
এর আগে সকালে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধেও গণমাধ্যমকর্মীদের ভাস্কর্য বিষয়ক প্রশ্ন এড়িয়ে যান ফখরুল।