বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কওমি ছাত্রলীগ গঠনে আগ্রহী নেতারা

  •    
  • ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৮:৪৫

মাদ্রাসায় কমিটি করতে নিক্সন চৌধুরীর প্রস্তাবের বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাদ্রাসার যারা ছাত্র তারাও তো ছাত্র। সে ক্ষেত্রে এ প্রস্তাবটি খারাপ না। এটা আমরা পজিটিভলি দেখতে পারি।’

মাদ্রাসায় কমিটি গঠনে যুবলীগ নেতা মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের পরামর্শ মনে ধরেছে ছাত্রলীগের।

ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে কীভাবে কী করা যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়।

বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সিংহভাগ কলেজেও আছে ছাত্রলীগের কমিটি। গত কয়েক বছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও গঠন করা হয়েছে ছাত্রলীগের কমিটি। আলোচনা থাকলেও স্কুল কমিটি গঠনের উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে এসেছে ছাত্রলীগ।

২০১৫ সালে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) দেশের কওমি মাদ্রাসার ওপর একটি জরিপ চালায়। তারা সে বছর মাদ্রাসার সংখ্যা পায় ১৩ হাজার ৯০২টি আর ছাত্র সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। এরপর আর কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। এর কোনোটিতেই কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন ছাড়া মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো কমিটি নেই।

কওমি মাদ্রাসায় ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের প্রস্তাব এসেছে যুবলীগ নেতা সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর পক্ষ থেকে

তবে ছাত্রলীগের একটি কমিটি আছে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায়।

ভোটের রাজনীতিতে কখনও ভালো করতে না পারা কওমি ঘরানার দলগুলো ইদানীং নানা ইস্যুতে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছে। বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরকে জড়ো করে শহর এলাকায় নানা সময় বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা হয়েছে।

আরও পড়ুন: সব মাদ্রাসায় ছাত্রলীগের কমিটি চান নিক্সন চৌধুরী

এবারও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে কওমি আলেমরা মূলত ছাত্রদের একজোট হওয়ার শক্তিকে ভর করে আগাতে চাইছেন।

এর মধ্যে গত শনিবার রাজধানীর শাহবাগে এক সমাবেশে আলোচিত যুবলীগ নেতা নিক্সন চৌধুরী ছাত্রলীগকে সব মাদ্রাসায় কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মাদ্রাসায় ছাত্রলীগের কমিটি করে দেন। মাদ্রাসার শিক্ষকদের বলব ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, উপজেলা থানায় ছাত্রলীগের কমিটি করে দেন। এবং গভর্নিং বডির নির্বাচিত সদস্যদের দিয়ে দেন।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ভাস্কর্য ইস্যুতে কওমি আলেমদের যুক্তি খণ্ডনের পাশাপাশি ছাত্রদেরকে উদ্দেশ করে নানা বক্তব্য রাখছেন। গত ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সমাবেশে ছাত্রলীগের সভাপতি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা কেন এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের কথা শুনছেন?’

নিক্সন চৌধুরী স্পষ্টত কওমি ঘরনায় মাদ্রাসাগুলোতে নিজেদের দখল চাইছেন। তার প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘মাদ্রাসার যারা ছাত্র তারাও তো ছাত্র। সে ক্ষেত্রে এ প্রস্তাবটি খারাপ না। এটা আমরা পজিটিভলি দেখতে পারি।’

তাহলে আপনারা মাদ্রাসায় কমিটি করছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ এ বিষয়ে আলোচনা করব। তখন এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত জানাব।’

ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় কমিটি থাকলেও কোনো কওমি মাদ্রাসায় কমিটি নেই ছাত্রলীগের

ছাত্রলীগের সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন খুবই উৎসাহী এ বিষয়ে। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় এ বিষয়টি আমি ব্যক্তিগতভাবে উত্থাপন করব। সকল মাদ্রাসায় ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে সে দিন অবশ্যই আলোচনা হবে।’

এই ছাত্রলীগ নেতা মনে করেন, কওমি মাদ্রাসায় কারও নজরদারি না থাকায় একতরফাভাবে বিভিন্ন ভাবধারার আলেমরা তাদের মতো করে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছাত্রদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। সেসব সঠিক কি বেঠিক, তার কোনো প্রশ্নও হয় না, আলোচনাও হয় না।

আরিফ বলেন, ‘মাদ্রাসায় যদি ছাত্রলীগের কমিটি হয়, তবে কিছুটা তো উপকার হবেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই মাদ্রাসায় ছাত্রলীগের কমিটি থাকুক, সেখানে ছাত্রলীগের কমিটি থাকুক। সেখানে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চর্চা হোক।’

ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম বাঁধন মনে করেন, এই কাজটি একটু কঠিন। তিনি বলেন, ‘এটার পজিটিভ-নেগেটিভ দুটোই হতে পারে।’

ইতিবাচক কী হতে পারে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে এই ছাত্রনেতা বলেন, মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ানো হয় না, বাঙালি জাতীয়তাবাদ শেখানোর ক্ষেত্রেও তারা পিছিয়ে আছেন। ছাত্রলীগের কমিটি দেয়া হলে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন।’

নেতিবাচক কী হতে পারে সে বিষয়ে এই নেতা বলেন, ‘ধর্মভিত্তিক মাদ্রাসাগুলো তো এখন ধর্মীয় জ্ঞানেই সীমাবদ্ধ। তারা এখনও অধিকাংশ জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে না। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এ বিষয়টি কীভাবে নেবে বলা মুশকিল।

বাংলাদেশে কওমি ঘরনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মাখামাখি কখনও ছিল না। যদিও ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে সে সময়ের কওমি ঘরনার নেজামে ইসলাম পার্টি ছিল আওয়ামী লীগের শরিক। কিন্তু পরে সে সম্পর্ক আর টেকেনি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় কওমি ঘরনার সিংহভাগ রাজনৈতিক দল ও সংগঠন পাকিস্তানের পক্ষে অংশ নেয়াসহ নানা ঘটনায় পরে দুই পক্ষে দূরত্ব বাড়ে। আর মুক্তিযুদ্ধের পরে বঙ্গবন্ধু সরকার ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধও করে।

কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে ২০০১ সালের পর। তার দুই বছর আগে তারা বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয় এবং ওই নির্বাচনে এই জোটের জয়ের পেছনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে ধারণা করা হয়।

এই ঘরনার নেতা কর্মীরা মসজিদ-মাদ্রাসার কাজ করার কারণে সাধারণ মানুষদের মধ্যে এক ধরনের প্রভাব আছে। আর তারা সেই ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে বিএনপির পক্ষে নানা সময় ভোট নিয়ে এসেছেন বলে ধারণা করা হয়।

অবশ্য বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকা অবস্থায় কওমি সনদের স্বীকৃতি আদায় করতে না পারার ঘটনায় এই শক্তির একাংশে মোহভঙ্গ হয়। আর আওয়ামী লীগ সরকারই এই স্বীকৃতি দেয়ার পর সরকারি চাকরিতেও যোগ দিতে পারছেন কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষ করা শিক্ষার্থীরা।

এসব ঘটনায় বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ কারও কারও মধ্যে গলেছে এবং সরকারের পক্ষেও এখন কওমি ঘরনার কেউ কেউ কথা বলেন।

এ বিভাগের আরো খবর