পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তোলার পর দেশের যেসব সংস্থা তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়েছিল, তারা এখন কোথায়, জানতে চেয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
মন্ত্রী বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন গবেষণা সংস্থা সিপিডি ও টিআইবির নাম, যারা কানাডা আদালতে পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির মামলা খারিজের পর থেকে কোনো কথা বলেনি।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনায় কথা বলছিলেন হাছান মাহমুদ। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার প্রতিবাদে এর আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট।
পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকার প্রথমে চুক্তি করেছিল বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি ও জাইকার সঙ্গে। তবে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার পর অন্যরাও চলে যায়।
বিশ্বব্যাংক যখন অভিযোগটি আনে, তখন বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, সিপিডি, টিআইবিও একই সুরে কথা বলে।
তবে ২০১৭ সালে কানাডা আদালতে করা বিশ্বব্যাংকের মামলা খারিজ হয়ে যায়। এর আগেই সরকার নিজ অর্থে সেতুর কাজ শুরু করে। গত ১০ ডিসেম্বর সবগুলো স্প্যান বসে যাওয়ায় পুরো সেতুটি দৃশ্যমান হয়েছে।
গত ১০ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর পুরোটা দৃশ্যমান হয়েছে। বিশ্বব্যাংক অভিযোগ তোলার পর টিআইবি নানা বক্তব্য দিলেও তারা এখন নীরব
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে একটা টাকাও ছাড় হয়নি। ছাড় যেখানে হয়নি সেখানে দুর্নীতি হয় কীভাবে? তারপর বিশ্বব্যাংকের এই বক্তব্যের সূত্র ধরে বাংলাদেশের কিছু সংগঠন আরও জোর গলায় সরকারের সমালোচনায় ব্যস্ত হয়ে গেলেন। সিপিডি টিআইবিসহ আরও বেশ কিছু সংগঠন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজ্ঞসহ কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিশ্বব্যাংকের কথায় লাফালাফি শুরু করেছিলেন। বিশ্বব্যাংকের চেয়েও জোর গলায় কথা বলেছিলেন। তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ অর্থায়নে সেতু করার ঘোষণা দেন। বিশ্বব্যাংকের টাকা লাগবে না।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যারা বিশ্বব্যাংক উহু করলে এখানে লাফ দেয়; যারা আন্তর্জাতিক কোনো মহল দেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলে তারা এখানে সংবাদ সম্মেলন করে, নানা রিপোর্ট প্রকাশ করে; তারা এখন কোথায়?
‘তারা চুপসে গেছেন কেন? তাদের মুখে কোনো কথা নাই কেন? তারা খুশি হন নাই? এই সিপিডি কই এখন? এই টিআইবি কই এখন? আরও কয়েকজনের নাম বলে লজ্জা দিতে চাই না।’
পদ্মা সেতু পুরোটা দৃশ্যমান হওয়ার পর নিউজবাংলার পক্ষ থেকে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
গত ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে টিআইবি ছাড়াও বিশ্বব্যাংকসহ নানা প্রতিষ্ঠানকে নিয়েই সামাজিক মাধ্যমে নানা পোস্ট আসছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের নিয়ে ট্রল হচ্ছে যা দেখে আমারি লজ্জা লাগে। তাদের লাগে কিনা জানি না।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আসলে এরা দেশের ভালো চায় না। এরা আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহলের নটি হিসেবে বিভিন্ন সময় কাজ করে। এদের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
‘ভাস্কর্য তো মোঘল আমল থেকেই’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কেন বিতর্ক তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে, সে প্রশ্নও তোলেন মন্ত্রী।
বলেন, ‘দেশে ভাস্কর্য আছে সেই মোগল আমল থেকে। স্বাধীনতার পর দেশে বহুজনের ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে। সেগুলো নিয়ে কোনো কথা নেই। হঠাৎ জাতির পিতার ভাস্কর্য নিয়ে কথা বলে!
‘সৌদি আরবে ভাস্কর্য আছে, তাদের বাদশার মুখাবয়বের ভাস্কর্য আছে, প্রাণীর ভাস্কর্য আছে। কই মক্কা শরীফ মদিনা শরিফের ইমাম সাহেব বা গ্র্যান্ড মুফতি তো কিছু বলেন না! আর আমাদের দেশের এই কয়েকজন ধর্ম ব্যবসায়ী খুব কথা বলেন! তারা কি মক্কা মদিনার ইমাম থেকেও বেশি জানেন, বেশি জ্ঞানী?’
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ফাল্গুনী হামিদও এ সময় বক্তব্য রাখেন।