বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভাসানী আছেন, ন্যাপ নেই

  •    
  • ১২ ডিসেম্বর, ২০২০ ২০:২৬

মওলানা ভাসানীর জন্ম-মৃত্যু দিবস তেমন ঘটা করে পালন করে না তার গড়া দল ন্যাপ। বরং ভাসানীর রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক অনুসারীরা ন্যাপের চেয়ে অনেক সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

রাজধানীর নয়াপল্টনের মসজিদ গলি দিয়ে এগুলে পুরোনো স্যাঁতসেতে একটি চারতলা আবাসিক ভবন।

৮৫ নয়া পল্টন। এই ভবনের দ্বিতীয় তলায় ১০ ফুট বাই ১২ ফুটের দুটি কক্ষে কার্যালয় ‘বাংলাদেশ ন্যাপ’ এর। কার্যক্ষেত্রে সবাই যেটিকে ন্যাপ (ভাসানী) নামে চেনে।

অফিসে থাকেন জাহাঙ্গীর নামের এক কর্মী। যদিও বেশিরভাগ সময় অফিস বন্ধ থাকে বলে জানিয়েছেন এলাকার একাধিক বাসিন্দা।

কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল দুটি কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার, চারটি টেবিল ও কিছু চেয়ার রয়েছে। রয়েছে বেশ কিছু নেতাকর্মীর ছবি, যার মধ্যে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ছবিই বেশি।

জাহাঙ্গীর জানান, অফিসে নেতারা খুব একটা কেউ আসে না। শুধু দলের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া মাঝে মাঝে আসেন। চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি এ কার্যালয়ে আসেন না।

বাংলাদেশের রাজনীতির এক সময়কার প্রভাবশালী নেতা ভাসানীর নিজস্ব দল ন্যাপ (ভাসানী)-এর কার্যালয়ই বলে দেয়, দেশের রাজনীতিতে দলটির নিভু নিভু অবস্থা।

মওলানা ভাসানীর জন্ম-মৃত্যু দিন তেমন ঘটা করে পালন করে না তার গড়া দল ন্যাপ। বরং ভাসানীর রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক অনুসারীরা ন্যাপের চেয়ে অনেক সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছরে দলটির সম্মেলন হওয়ার মাধ্যমে নেতৃত্ব ঠিক হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৫ সালের পর সেটি আর হয়নি। ১১১ সদস্যর নির্বাহী কমিটি থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে কমিটিতে আছেন ৫৫ জন। করোনায় সেই কমিটিরও কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৮ সালে দলটির ৩০টি জেলা কমিটি থাকলেও বর্তমানে অবশ্য তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮টিতে।

টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে দলটির মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলের অবস্থান এখন তেমন নয়। ৩৮ জেলায় কমিটি থাকলেও অনেক জেলার নেতারা করোনায় মারা গেছেন। ২০২০ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের কথা ছিল। করোনায় সেটাও সম্ভব হয়নি। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে আমরা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেব।’

তিনি বলেন, ২০০৬ সালে ন্যাপের পুনর্জন্মের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ছিল দলটি। ২০১৮ সালে সেই জোট থেকে বের হয়ে আসে ন্যাপ। ‘গাভী’ মার্কা নিয়ে অংশ নেয় জাতীয় নির্বাচনেও। ১৫ টি আসনে মনোনয়ন জমা দিলেও চার জনের মনোনয়ন টেকে। কিন্তু তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয় প্রয়োজনীয় ভোট না পাওয়ায়।

ন্যাপের পুরোনো অফিস ছিল নয়াপল্টনে। সেই ভবন এখন বিএনপির নগর কার্যালয়, যদিও ভবনটির নাম এখনও ‘ভাসানী ভবন’।

ন্যাপ মহাসচিব বলেন, ‘আদি কার্যালয় এখন বিএনপির দখলে। বিএনপিতে একীভূত হওয়ার পরই সাদেক হোসেন খোকা ভাইয়ের নেতৃত্বে অফিসটি বিএনপি দখলে নেয়। যদিও এখনও বিএনপিতে ভাসানীপন্থি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, শামসুজ্জামান দুদু, আব্দুল্লাহ আল নোমানরা নেতৃত্বে রয়েছেন।’

শনিবার ১২ ডিসেম্বর মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর জন্মদিন। শুধু রাজনীতিকই নন, একজন আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবেও ভক্তদের হৃদয় জয় করেছিলেন তিনি।

এক সময় তিনি ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা। ১৯৬৭ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন।

বাংলাদেশের জন্মের আগেই সেই দল দুই ভাগ হয়েছে মস্কো ও চীনপন্থিতে। চীনপন্থি অংশের নেতা হিসেবে রাজনীতির মঞ্চে উপস্থিত হন মওলানা ভাসানী। মস্কোপন্থিদের নেতৃত্বে থাকেন ওয়ালী খান এবং পরবর্তী সময়ে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ।

স্বাধীনতার পর ভাসানীর ন্যাপ নিজেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে একীভূত হয় জাগদলে (জাতীয় গণতান্ত্রিক দল)। এটি পরবর্তী সময়ে হয়ে যায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সে হিসেবে ন্যাপ (ভাসানী) বিএনপিতে বিলুপ্ত হয়ে যায়। সেই থেকে ন্যাপের অফিস ‘ভাসানী ভবন’ও বিএনপির দখলে। ২০০৬ সালে আবার ফিরে আসে ন্যাপ (ভাসানী)।

রাজনীতিক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, দলের অবস্থা নিভু নিভু হলেও দেশের রাজনীতিতে ভাসানী এখনও প্রাসঙ্গিক থেকে গেছেন।

মওলানা ভাসানীর এক সময়ের শিষ্য বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ভাসানীর জন্মদিন সম্পর্কে নিউজবাংলাকে বলেন, “আসলে ভাসানী সাহেবের জন্মদিন তো ঠিক করে বলা যায় না। একবার কামাল লোহানী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার বয়স কত?’ তখন তিনি হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘জাফর-মেননকে জিজ্ঞেস করো। ওরা আমার জন্মদিন পালন করে’।”

ভাসানী ও তার দলের অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভাসানী জনমানুষের নেতা, এটা নিয়ে তো বলার কিছু নেই। কিন্তু ভাসানী ন্যাপ তো আসলে তিনি বেঁচে থাকা অবস্থাতেই নেই হয়ে গেছে। যেটা আছে সেটাকে ঠিক ভাসানী ন্যাপ বলা যায় না।

‘১৯৭৮ সালে ন্যাপ তো (মশিউর রহমানরা) জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টে যোগ দেয়। ভাসানী সে সময় খেলাফতে রাব্বানী নামে একটি দল করেছিলেন। পরে মশিউর রহমানের নাতি ও গাজী শহিদুল্লাহরা ন্যাপ করল। সেটাও বিএনপির সাথে গেল।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মওলানা ভাসানী একজন ধর্মীয় ব্যক্তি হলেও তার মধ্যে ধর্ম নিয়ে কোনো গোঁড়ামি ছিল না; বরং তিনি মনে করতেন ধর্ম মানুষের জন্য। একই সাথে রাজনৈতিক জীবনে তিনি অনেক পরিছন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি এতটা পরিছন্ন ছিলেন যে, তার মুখে কেউ কালিমা দিতে পারবে না। সেই জন্য এখনও পর্যন্ত তার জনপ্রিয়তা সবখানে। বহু মানুষ এখনো তার জিকির করে।’

তিনি বলেন, ‘ভাসানী না থাকলেও তার কথা সর্বদলের মানুষ স্মরণ করে সবসময়। তবে অনেক নবীন তার জীবন সম্পর্কে জানেন না। সেই জন্য আমি মনে করি সরকার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে সমস্ত কাজ করে যাচ্ছে, যেমন ভাস্কর্য, তেমনি মওলানা ভাসানীকে নিয়েও করা উচিত। তাকে সকলের সামনে তুলে ধরা উচিত।’

অন্যদিকে ভাসানী গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলছিলেন, ‘ভাসানীর যে রাজনৈতিক দল ছিল, উনি বেঁচে থাকতেই সেই দল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। এখন তো আর সেই রাজনৈতিক দল নেই। সবারই যে চিরকাল একই দল থাকে, তা তো হয় না। ওই নামে আছে দল। তবে উনার দল নেই।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ভাসানী ছিলেন লড়াইয়ের সাথে সাথে। তিনি যে দল করেছেন, তার পরিণতির সঙ্গে ভাসানীকে মেলানো যাবে না। যখনই তার দল ক্ষমতা পেয়ে জনগণ থেকে বের হয়ে গেছে, তখনই তিনি সেই দল থেকে বের হয়ে এসেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন দল আসে যায়, কিন্তু ভাসানী থেকে যায়। এতে আমি বলব, তার তৈরি করা দল আছে কী নাই, তা দিয়ে ভাসানীকে বিচার করা যাবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর