পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরু থেকে সরকারের সমালোচনা করতে থাকা বিএনপি শেষ স্প্যান বসানো নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে নিউজবাংলাকে দলটির দুই জন নেতা বলেছেন, দেশে এখন গুরুত্বপূর্ণ অন্য ইস্যু।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, দেশের মানুষ খেতে পারছে না, মহামারিকালে চিকিৎসা পাচ্ছে না, এ সময় সরকার সেতু নিয়ে লাফালাফি করছে। এটা ঠিক হচ্ছে না।
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, দেশ এখন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, এটাই হচ্ছে কথা।
২০১১ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণে ঋণ চুক্তির পর থেকে বিএনপি এই সেতু নির্মাণ নিয়ে সরকারকে আক্রমণ করে আসছিল। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংকের বক্তব্যের পর একের পর এক আক্রমণ এসেছে দলটির পক্ষ থেকে। বারবার বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার এই সেতু করতে পারবে না।
২০১৭ সালে কানাডার আদালত এই প্রকল্পে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ উড়িয়ে দেয়ার পর অবশ্য বিএনপির সেসব বক্তব্য কমে আসে। তবে ২০১৮ সালে সেতুর ১৪টি পাইল নির্মাণে জটিলতা তৈরির পর আবার সেতু করতে পারবে না বলে বক্তব্য আসতে থাকে।
ওই বছরের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক অনুষ্ঠানে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না। অনেক রিস্ক আছে।’
২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া পদ্মা সেতুতে না উঠতে দলের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান
এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর তীব্র সমালোচনা করলেও খালেদা জিয়ার পাশে দাঁড়ান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
১২ জানুয়ারি দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) ভুল বলেননি। বরং তিনি সাচ্চা দেশপ্রেমিকের কাজ করেছেন।’
সেতুর স্প্যান বসা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই দেশজুড়ে চলছে উচ্ছ্বাস। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে এই সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও রাজনৈতিক শক্তির প্রমাণ দিয়েছে বলে মন্তব্য করছেন বহুজন।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে এখন একটা অবস্থা চলছে, তখন এনারা (সরকার) নতুন করে লাফালাফি করতেছেন এই পদ্মা সেতু নিয়ে। দেশে মানুষ ঠিকঠাক খেতে পায় না, চিকিৎসা পায় না, মহামারি সময় পার করছে। আর তেনারা একেকটা নতুন আইটেম এনে এনে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।’
‘আপনাদের চেয়ারপারসন বলেছিলেন পদ্মা সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে, উঠলে ভেঙে পড়বে বা পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হবে না কোনোদিন'- এ বিষয়ে মন্তব্য কী?’
নির্মাণ শুরুর পাঁচ বছর পর পদ্মা নদীতে এখন পুরো সেতুই দৃশ্যমান। আর এক বছরের মধ্যে যান চলাচল শুরুর বিষয়ে আশাবাদী সেতুমন্ত্রী
এমন প্রশ্নে সেলিমা বলেন, ‘পদ্মা সেতু হলে ভালো তো। দুর্নীতির টাকায়, লুটের টাকায় অন্তত ভালো কিছু হচ্ছে, এটা এটলিস্ট বলা যাবে।’
সেলিমা দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ এবং তার এলাকায় যাতায়াতে এই সেতু বেশ উপকারী হবে।
নেত্রীর পরামর্শ মেনে সেতু ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন কি না- এমন প্রশ্নে হেসে ফেলে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে কোনো প্রশ্ন না যে ব্যবহার করব কি না। হোক আগে। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’
‘জোড়াতালির পদ্মা সেতু’ নিয়ে খালেদা জিয়ার এই মন্তব্য আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খানের একটি বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে। সম্প্রতি তিনি এক আলোচনায় বিএনপি নেতা-কর্মীদেরকে বলেছেন, দলীয় নেত্রীর ভালো চাইলে তারা যেন পদ্মা সেতুতে না উঠে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সব মন্তব্যের উত্তর দিতে হয় না। এই মন্তব্যেরও জবাব দেব না। দেশে এখন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, এটাই হচ্ছে কথা।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে কি আমাদের টাকা নাই? আমরা কি বাংলাদেশের নাগরিক না? তারা সেতুটা বানাইছে আসলে কার জন্য যে ব্যবহারের আগেই নিষেধাজ্ঞার পুঁথি বানাইতেছে?’
গয়েশ্বর বলেন, ‘পদ্মা সেতুর গুরুত্ব আমাদের কাছেও আছে। আমরা সমালোচনা করেছিলাম এর ব্যয়বহনের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে, তাদের দুর্নীতি নিয়ে।’
বাংলাদেশ নিজ অর্থে যে সেতু করেছে, সেখানে সবার টাকা আছে- এটিও মনে করিয়ে দেন বিএনপি নেতা। বলেন, এটা কেবল আওয়ামী লীগের কৃতিত্ব হতে পারে না।