জাতীয় প্রেসক্লাবর সামনে একই সঙ্গে দুটো আয়োজন। এক পাশে ছয়টি চিনিকল বন্ধের প্রতিবাদে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের মানববন্ধন। অন্যপাশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ।
অনুমতি না থাকায় পুলিশ আটকে দিল শ্রমিক দলের কর্মসূচি। সেখানে উপস্থিত বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা এমরান সালেহ প্রিন্স প্রশ্ন তুললেন, তারা দাঁড়াতে না পারলে পাশের এরা কীভাবে দাঁড়াচ্ছে। তখন পুলিশ সরিয়ে দিল ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদকারীদেরও।
বুধবার সকালে এই ঘটনা ঘটে।
সকাল ১১ টায় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকেন শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীরা।
অন্যদিকে সাড়ে ১০ টা থেকেই জড়ো হন মুক্তিযোদ্ধা লীগের নেতা কর্মীরা। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিক্রিয়ায় এই কর্মসূচি দেয় সংগঠনটি।
পুলিশ যখন শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীদেরকে চলে যেতে বলে, তখন বিএনপি নেতা এমরান সালেহ প্রিন্স তর্কে জড়ান। বলেন, ‘আমরা তো অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয়েছি। আপনারা কোনো উত্তর দেননি। আবার করা যাবে না সেটাও বলেননি।‘
এ সময় পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘উত্তর দেয়নি মানেই তো অনুমতি দেয়া হয়নি।’
পাশে ভাস্কর্যবিরোধীদের নিন্দা জানিয়ে চলতে থাকা স্লোগানকারীদের দেখিয়ে তখন প্রিন্স বলেন, ‘এনারা কারা, এদের উঠাচ্ছেন না কেন? তাদের অনুমতি আছে?’
জবাবে এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘তাদের কাছেও যাচ্ছি।’
জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধনে বাধা পেয়ে বিএনপি নেতা এমরান সালেহ প্রিন্স প্রশ্ন তোলেন কেন তবে পাশের মানববন্ধন চলছে। পরে সরিয়ে দেয়া হয় তাদেরও
এ সময় শ্রমিক দলের এক কর্মী বলতে থাকেন, ‘আমাদের একদম দাঁড়াতেই দিচ্ছে না। আর তারা ব্যানার খুলে পতাকা তুলে স্লোগান দিচ্ছে।’
এক পর্যায়ে অনুমতিহীন সব সভা সমাবেশও বন্ধ করার কথা জানিয়ে শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীদেরকে প্রেসক্লাব ছাড়তে বলে পুলিশ। কিছুক্ষণ পরে সরিয়ে দেয়া হয় ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদকারীদেরও।
রাজধানীতে সড়কে সভা সমাবেশ করতে হলে পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশ এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। তারা বলেছে, অনুমতি ছাড়া সভা সমাবেশ দণ্ডণীয়।
মুক্তিযোদ্ধা লীগের সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমান ঝন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অনুমতি ছিল না। পুলিশ তার কাজ করেছে। আমরা তা মেনে নিয়ে স্থান ত্যাগ করেছি।’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ায় আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ
তিনি বলেন, ‘যদিও আমরা যৌক্তিক দাবিতেই ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে এই জঙ্গিগোষ্ঠী, তাদের গ্রেফতার করা হোক।’
মুক্তিযোদ্ধা লীগের পাঁচ দাবি
১. হেফাজতে ইসলামের জুনাইদ বাবুনগরী ও মামুনুল হককে অবিলম্বে গ্রেফতার করে তাদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
২। জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, উসকানিমূলক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩। ওয়াজ মাহফিলে ও খুতবার নামে ভিন্নধর্ম ও ভিন্নমতে বিশ্বাসীদের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো ও হুমকিদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৪। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং জাতির পিতার জীবন ও দর্শন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা অস্বীকারকারীদের শাস্তি নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। সামাজিক মাধ্যমে জাতির পিতার বিরুদ্ধে বিষোদগারকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।