ওয়াজ মাহফিলে রাজনৈতিক আলোচনা হলে তা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। এ জন্য প্রতিটি পাড়া মহল্লায় নজর রাখবে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনটি।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ ইস্যুতে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা এবং কুষ্টিয়ায় নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুরের পর ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ এই ঘোষণা দিল।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে বিক্ষোভে এই ঘোষণা দেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান জয়।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারী কওমি আলেমদের আয়ের একটি বড় উৎস শীতকালীন ওয়াজ। তবে ধর্মীয় বিষয়ের বাইরে গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক নানা বিষয় নিয়েও কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষদের উত্তেজিত করার অভিযোগ আছে ওয়াজে।
এসব ওয়াজের বক্তারা বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করলেও আয়কর দেন না বলে অভিযোগ আছে। ক্ষমতাসীন জোট ১৪ দল সরকারকে অনুরোধ করছে ওয়াজের আয়ের হিসাব নিতে।
- আরও পড়ুন: ওয়াজের আয়ের হিসাব নিন, সরকারকে ১৪ দল
সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘তাদের আর এক চুলও ছাড় দেবেন না। সারা দেশের প্রত্যেকটা পাড়ায় মহল্লায়, যেখানে তারা টাকার বিনিময়ে ওয়াজে গিয়ে যদি কোনো রাজনৈতিক আলোচনা করে, আপনারাও ওয়াজ মাহফিলে তাদের প্রতিহত করবেন।’
কওমি মাদ্রাসার আলেমদের আয়ের একটি বড় অংশ আসে শীতকালীন ওয়াজে
জয় বলেন, ‘তোরা আমাদের কলিজায় হাত দিয়েছিস। তোদের মতো কুলাঙ্গারদের জন্য অনেকে আমাদের বেয়াদব বলে। তোদের শায়েস্তা করার জন্য আমরা যদি বেয়াদবও তাও আমরা হতে চাই।
ভাস্কর্যবিরোধীদের আর কোনো ছাড় দেয়া হবে না জানিয়ে ছাত্রলীগ প্রধান বলেন, ‘তোদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে গণধোলাই দেওয়া হবে।’
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য যারা ভেঙেছে তাদের গণধোলাই দেয়ার আহ্বানও জানান ছাত্রলীগ সভাপতি।
হেফাজত নেতা মামুনুল হককে উদ্দেশ করে জয় বলেন, ‘তোরা ফেসবুকে ওয়াজ মাহফিলে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিস। সামনে আয় আমি তোদের দেখব।’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সমাবেশের একাংশ
ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করা শিক্ষকদের কথা না শুনতে মাদ্রাসার ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানান ছাত্রলীগ নেতা। বলেন, ‘আপনারা কেন এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের কথা শুনছেন?’
ভাস্কর্য টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়া হেফাজতে ইসলামের নেতাদের ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘আপনাদের উদ্দেশ্য আমরা জানি, হেফাজত কিসের হেফাজত করছে? জামায়াতে ইসলামের হেফাজত?’
সমাবেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আপনাদের বলা বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু এবার আপনারা সীমা লঙ্ঘন করেছেন। এখন আপনাদের বিরুদ্ধে সারাদেশেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা মাদ্রাসা ছাত্রদের বলাৎকার করছেন। মনে রাখবেন অপকর্ম করে দেশে কেউ পার পায়নি। আপনাদেরও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি আমরা।’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন সংগঠনের সভাপতি আল নাহিয়ান জয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসানসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে আগে ক্যাম্পাসে মিছিল করে ছাত্রলীগ। বেলা সাড়ে ১২টায় মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি কলা ভবন হয়ে রাজু ভাষ্কর্য পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিল থেকে ‘শিবিরের চামড়া, তুলে নেব আমরা’, ‘লাল সবুজের পতাকায় মুজিব তোমায় দেখা যায়’, ‘মৌলবাদের আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’-এমন স্লোগান দেয়া হয়।
এই কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, থানা ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে আসেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।