বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নেতার ফ্ল্যাটে আ. লীগ

  •    
  • ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ১২:২১

লক্ষ্মীপুর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় না থাকায় দল পরিচালনায় নানা সমস্যা। জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজের বাসার কক্ষকে দলীয় কার্যালয় দাবি করছেন।

লক্ষ্মীপুর আওয়ামী লীগের নিজস্ব কার্যালয় নেই, দল পরিচালনা করা হয় দুই নেতার আবাসিক ফ্ল্যাট থেকে।

মাদাম ব্রিজ এলাকায় দলের জেলা শাখার সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর বাসায় একটি ব্যক্তিগত অফিস আছে। তার দাবি, সেটিই দলের কার্যালয়।

সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন একজন আইনজীবী। তার বাসা বাঞ্ছানগর এলাকায়। সেখানেই তার ব্যক্তিগত চেম্বার। তিনি দাবি করেছেন, এটিই দলীয় কার্যালয়।

লক্ষ্মীপুর আওয়ামী লীগের এই দৈন্যদশা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেই আছে নানা জিজ্ঞাসা।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ভূঁইয়া আজাদ বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এখন পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের নিজস্ব কোনো কার্যালয় নেই। আমরা কোথাও বসে যে পরামর্শ করব, তার উপায় নেই। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। সবার মত নয়, কয়েকজনের মতেই চলছে দল।’

মাদাম ব্রিজ এলাকায় লক্ষ্মীপুর আওয়ামী লীগের জেলা শাখার সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর বাসা। ছবি: নিউজবাংলা

 

কার্যালয় না থাকায় বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বর্ধিত সভা হয়েছে বাঞ্ছানগরের কুটুমবাড়ী রেস্টুরেন্টে। এতে যোগ দেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শাহজাহান কামাল ও লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান।

এ সময় দলীয় কার্যালয় না থাকার বিষয়টি নিয়ে কথা তোলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে জেলা কমিটির সভাপতি বলেন, সাবেক সভাপতি এম এ আলাউদ্দিনকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে অফিস নেয়া যায়নি।

মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটিতে দল ’গতিহীন’

চট্টগ্রাম বিভাগের এই জেলাটিতে আওয়ামী লীগ তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় দুর্বল বলেই নানা সময় দেখা গেছে। গত দুটি সংসদ নির্বাচনের আগে এমনকি ২০০৯ সালে যখন সারাদেশে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার, তখনও জেলায় একটি আসনও পায়নি দল।

অবশ্য একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব কটি আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন জোট, যদিও বিএনপির দাবি, ব্যাপক কারচুপি হয়েছে সেখানে।

টানা ক্ষমতায় থাকার ফলে জেলায় বেশ কিছু উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে জনপ্রিয়তা বাড়ার দাবি করছেন নেতারা। তবে সংগঠনের কর্মকাণ্ডে যে গতি আসেনি, তার নানা উদাহরণ আছে।

বর্তমানে যে কমিটি রয়েছে, সেটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। পদ ধরে রাখতে মরিয়া এক পক্ষ, আবার যারা কমিটিতে আসতে চান, তারা উপায় না পেয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন।

২০১৫ সালের ৩ মার্চ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। এতে গোলাম ফারুক পিংকুকে সভাপতি ও নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সেই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে পৌনে তিন বছর আগে। কিন্তু নতুন কমিটি গঠন হয়নি।

উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিরও একই দশা।

২০০৪ সালে লক্ষ্মীপুর পৌর কমিটি, ২০০৫ সালে রামগঞ্জ পৌর কমিটি, ২০১২ সালে রায়পুর পৌর কমিটি এবং ২০১৩ সালে রামগতি পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়েছিল। মেয়াদ শেষ হলেও শাখা কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা হয়নি।

২০১৪ সালে চন্দ্রগঞ্জ থানা গঠিত হয়। রীতি অনুযায়ী ২০১৭ সালে করার কথা ছিল আরেকটি কমিটি। কিন্তু সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি।

প্রায় ১৮ বছর ধরে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে রায়পুর ও রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগ। ২০০৩ সালের পর এই দুটি শাখায় আর সম্মেলন হয়নি।

রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরি দুলাল ও রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মাওলা চৌধুরীসহ প্রায় ৩৮ জন মারা গেছেন। তার পরেও কেউ উদ্যোগী হয়নি।

মেয়াদ নেই লক্ষ্মীপুর সদর ও কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগেরও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন, কমিটি না থাকায় ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। পদপদবি বণ্টন ও কমিটি বহাল রাখা নিয়ে তারা নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ভূঁইয়া আজাদ বলেন, ‘নেতারা নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত। জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চালাচ্ছেন দলীয় কার্যক্রম। এতে করে ত্যাগী সাবেক ছাত্রনেতাদের বেশিরভাগই পদবঞ্চিত রয়ে গেছে। ফলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন দিনদিন।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন মাস্টার বলেন, ‘সুদিনেও দল গোছাতে ব্যর্থ হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির কর্ণধাররা। উন্নয়নেও উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি তারা। যদি তারা দল ও জেলার প্রতি আন্তরিক হতেন, তাহলে এমন বেহাল দশা হতো না।’

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথমে উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিটি ইউনিটে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করার কথা রয়েছে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, ‘মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বহাল, পদপদবি ও নমিনেশন বাণিজ্যের বিষয়টি একটি অপপ্রচার।’

এ বিভাগের আরো খবর