বিএনপি শাসনামলে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নামে করা স্কুলের নতুন নামফলক বিএনপি নেতা-কর্মীদের মুছে দেয়ার ঘটনাটি গত কয়েক বছরের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বেশ চমকপ্রদই বলা যায়।
২০১৫ সালে সরকার পতনের আন্দোলনে নেমে খালি হাতে ঘরে ফেরার পর বিএনপি কখনও এই ধরনের চ্যালেঞ্জে যায়নি সরকারের সঙ্গে।
গত রোববার এই ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে অবিভক্ত ঢাকার প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়, সোম, মঙ্গল ও বুধবার বিএনপি টানা বিক্ষোভ করেছে ইস্যুটি নিয়ে। হুমকি দিয়েছে সরকারকে দেখে নেয়ার। এমনও বলেছে, ঢাকায় থাকতে হলে, দেশে থাকতে হলে জিয়াউর রহমানের সাইনবোর্ড আবার তুলতে হবে।
আইসোলেশনে যাওয়ার আগে ১৮ সেপ্টেম্বরের পর বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপির হঠাৎ এই সক্রিয়তা শুরু গত ১৮ নভেম্বর থেকে, যেদিন ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপনির্বাচনে ভোট হয়েছিল।
ভোটে কারচুপির অভিযোগ এনে পুরানাপল্টনে দলীয় কার্যালয় থেকে সেদিন মিছিল বের করে ছাত্রদল ও যুবদল নেতা-কর্মীরা।
ওই দিন ঢাকায় ১১টি বাসে আগুন দেয়ার পর মামলা হয়েছে বিএনপি-ছাত্রদল-যুবদল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। গ্রেফতারও হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
কিন্তু ওই দিন থেকেই ঢাকায় নানা ইস্যুতে প্রায়ই মিছিল-সমাবেশ করছে ছাত্রদল-যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দল, বিএনপির ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ শাখা। কেন্দ্র থেকে অবশ্য কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি।
পুলিশ এই সময়ে বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে, এমনটিও দেখা যায়নি, যদিও বুধবার বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, পূর্বানুমতি ছাড়া সমাবেশ-জমায়েত বেআইনি।
এক স্বজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এ কারণে গত সপ্তাহের কোনো কর্মসূচিতে যোগ দেননি।
অবশ্য ভোটে কারচুপির অভিযোগ এনে আগের সপ্তাহে টানা দুই দিন রাজপথে সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন ফখরুল।
বিএনপির হঠাৎ সক্রিয়তা নিয়ে নিউজবাংলাকে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বরাবরই সক্রিয় ছিলাম। এখনও আছি। তবে আগে নানান ঝামেলা ছিল, যেগুলো উৎরে এখন আমরা গণজোয়ার সৃষ্টি করার প্রচেষ্টায় আছি।’
গত ২৯ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের নাম পাল্টানো স্কুলের ফলকে কালি লাগিয়ে দেয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা
ফখরুলের দাবি, বুধবার ডিএমপি সভা সমাবেশের পূর্বানুমতির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তা তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই দেয়া হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এতটুকুতেই সরকার ঘাবড়ে গেল! পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেল! আর অধীনস্ত প্রশাসন দিয়ে সেখানেও নিজেদের ফ্যাসিবাদী মনোভাব দেখাল।’
‘বলছে পূর্ব অনুমতি ছাড়া সভা-সমাবেশ করা যাবে না। কিন্তু নিজেরাও রাস্তা ঘাট দখল করে সভা সমাবেশ করে’-বলেন ফখরুল।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
তিনি বলেন, ‘গণজোয়ার শুধু বিএনপি না, দেশের জনগণের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে। তবে, সেটা প্রকাশের মাধ্যমকে সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভীত সন্ত্রস্ত করে রেখেছে। তবে এটা বেশিদিনের না…শিগগির এটা শেষ হবে। জনগণ বিএনপি চাক বা না চাক, তবে এই সরকারকে চায় না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আওয়ামী জনগোষ্ঠী বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ঢালাওভাবে প্রচার করেছে যে বিএনপি নাই, বিএনপি চুড়ি পরে আছে। যা অসত্য। বিএনপি রাজনীতিতে যেমন আছেন তেমনি আছে, বিএনপি তার নিজের গতিতে অটল।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলন সবসময় ছিল। তবে আন্দোলন তুঙ্গে ওঠার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা লাগে। বিএনপি সেই আন্দোলনের দিকে আগাচ্ছে। কে জানে আন্দোলন কখন তুঙ্গে উঠে যায়।’
২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিএনপির কর্মসূচিতে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তবে সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলোতে তা দেখা যায়নি।
সেলিমা বলেন, ‘আমরা আন্দোলন চালাচ্ছি। তবে তারা তো প্রশাসনকে জিম্মি করে রাখছে। তাদের হাতে অস্ত্র আছে। আমাদের তো আর অস্ত্র নেই, আর থাকলেও কি আমরা সহিংসতায় যাব নাকি?’
‘তাই আমরা গণতান্ত্রিকভাবে আমাদের কর্মসূচি করে আসছি।’