সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যাওয়া পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকীকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সে দেশের সেনাবাহিনী ও তার দোসরদের নৃশংসতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, সেই নৃশংসতা বাংলাদেশ কখনো ভুলতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে আসেন ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন, যিনি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য গণমাধ্যমকে জানানো হয়। এতে জানানো হয়, পাকিস্তানি দূতকে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘৭১ এর নৃশংসতা ভোলার নয়’।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে জন্ম হওয়া রাষ্ট্র পাকিস্তানে সব দিক থেকে বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছিল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতার স্বপ্নকে গুঁড়িয়ে দিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ।
আক্রমণের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করার পর তাকে বন্দি করে পশ্চিম পাকিস্তানে নেয়া হয়। পরে তাকেই রাষ্ট্রপতি করে গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর অভ্যুদয় হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
যুদ্ধ চলাকালে ইতিহাসের নজিরবিহীন গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে পাকিস্তানি বাহিনী ও তার দোসররা। হত্যা করেছে ৩০ লাখ মানুষকে। ধর্ষিত হয়েছে আড়াই লাখেরও বেশি নারী। বাংলাদেশের বারবার দাবির পরেও পাকিস্তান ক্ষমা চায়নি। বাংলাদেশের সম্পদও ফিরিয়ে দেয়নি।
বিজয়ের মাসে পাকিস্তানি দূতকে বঙ্গবন্ধু কন্যা সেই নৃশংসতার কথাই স্মরণ করান।
এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারির নথি নিয়ে প্রকাশিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অফ দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইয়ের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বইটি থেকে ১৯৪৮-১৯৭১ সময়ের অনেক ঐতিহাসিক সত্য জানা যাবে।
বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র উর্দু সংস্করণ যে পাকিস্তানে অন্যতম ‘বেস্ট সেলার’, সে কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্য দেশের মত পাকিস্তানেও এটি অধিক পঠিত বই।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দেন হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী। হাই কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
বৈঠকে হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ অভাবনীয় দ্রুততায় যে উন্নয়নের নজির গড়েছে, সেখান থেকে শেখার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান।
ইমরান আহমেদ বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায়। দুই দেশের কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা চান তিনি।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের পররাষ্ট্র পর্যায়ের নিয়মিত আলোচনায় কোনো বাধা নেই। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ সামনে এনে শেখ হাসিনা আরও বলেন, তিনি আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিশ্বাস করেন।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী।