বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ ইস্যুতে বেশ কয়েক সপ্তাহ চুপ থাকার পর অবশেষে এ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।
ভাস্কর্যবিরোধীদের প্রতিহত করতে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে নেতাদের বক্তব্য। রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ।
শীর্ষ নেতারা এতদিন চুপ থাকলেও চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা ভাস্কর্য ইস্যুতে হুমকি দেয়া হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হককে জেলার একটি মাহফিলে যোগ দেয়া থেকে ঠেকিয়ে দিয়েছেন।
এই নেতা-কর্মীরা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। তিনি অবশ্য আগেই সোচ্চার হয়ে ভাস্কর্যবিরোধীদের ঘাড় মটকে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে জাতির পিতার ভাস্কর্য নির্মাণে বেদি তৈরি হয়ে গেছে। হঠাৎ মাঠে নামে চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। এটি নির্মাণ হলে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়ার হুমকি দেয় তারা।
এরপর হেফাজতে ইসলামীর যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক হুমকি দেন আরও একটি শাপলা চত্বর করার। তখনও চুপ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
এর মধ্যে বৃহস্পতি ও শুক্রবার চট্টগ্রামে রাজপথে নেমে মামুনুল হককে মাহফিলে যোগ দেয়া ঠেকিয়ে দেয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীরা।
হেফাজত নেতা মামুনুল হককে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীরা সমাবেশ করে
সেই মাহফিলে আবার হেফাজত আমির জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ভাস্কর্য যেই বানাক, যারই বানাক তা টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেবেন তারা।
এরপর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
তার আগেই দেশজুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ। মাঠে নামবে যুবলীগ। ছাত্রলীগ গত কয়েকদিন ধরেই ভাস্কর্যবিরোধীদের সতর্ক করে নানা কর্মসূচি পালন করছে।
হানিফ স্পষ্টতই সতর্ক করেছেন হেফাজতে ইসলামকে। শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনায় সরকারের শক্তি সম্পর্কে ধারণা রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘যারা আবার শাপলা চত্বরের হুমকি দেয়, তাদের লজ্জা থাকা উচিত। লেজ গুটিয়ে পালিয়েছিল তারা, কোনো হুমকি কাজে আসবে না। সরকারের শক্তি সম্পর্কে তাদের ধারণা থাকা উচিত।’
মামুনুল হক ও ফয়জুল করীমকে গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার রাজধানীর শাহবাগে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের বিক্ষোভ
নিজের ফেসবুক পেজে আওয়ামী লীগ নেতা লেখেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য নিয়ে যারা উল্টাপাল্টা কথা বলছেন তাদের মনে রাখা দরকার এটা পাকিস্তান নয়। এটা স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশে এই ধরনের বক্তব্য বরদাশত করা হবে না। এই কুচক্রীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বাবুনগরীর হুমকি নিয়ে কথা বলেছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি হেফাজত নেতার বক্তব্যকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তাদের এমন রুচি এবং ভাষা ব্যবহার দেখে তাদের ধর্মচর্চা ও ইসলামি রুচিবোধ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশকে অস্থীতিশীল করতে একটি মহল ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ।’
ভাস্কর্যবিরোধীদের প্রতিহতের ডাক দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সমাবেশ
ফারুক বলেন, ‘তারা (ভাস্কর্যবিরোধীরা) যদি দেশে অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
ভাস্কর্য বিরোধীদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে রোববার সকালে সারাদেশে একযোগে নামছে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য যে কোনো মূল্যেই হবে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখতে আমরা মাঠে থাকব।’
রোববার মাঠে নামছে যুবলীগও। দুপুরে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী বিক্ষোভ ও মিছিলের ডাক দেয়া হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
ছাত্রলীগ-যুবলীগের প্রতিরোধের আহ্বানের মধ্যে চট্টগ্রামে হাটহাজারীর মাহফিলে যাননি হেফাজত নেতা মামুনুল হক
সংগঠনের সহ সম্পাদক আজিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তাদের উচিত জবাব দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত।’
শুরুতে চুপচাপ থাকলেও গত এক সপ্তাহ ধরে মাঠে নেমেছে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সমাবেশে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘বুড়িঙ্গার তীরে আসেন। সবগুলাকে ভাসায়া দেব।’
ছাত্রলীগের সহসভাপতি সোহান খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে হেফাজত ও বাবুনগরী অপ্রয়াস চালাচ্ছে। তারা বাঙালি জাতিকে তালেবান বানাতে চায়। এদের রাজপথে প্রতিরোধ করতে সব সময় প্রস্তুত আছে ছাত্রলীগ।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কঠোর হচ্ছে। হেফাজত নেতা মামুনুল হককে চট্টগ্রাম ঢুকতে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে রাজধানীতে শুক্রবার মাঠে নামার চেষ্টা করে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তবে কাকরাইল এলাকায় তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। আটক করা হয় বেশ কয়েকজনকে।