ছাত্রলীগ-যুবলীগের প্রতিহতের ডাকের মধ্যে দিনের বদলে রাতের আঁধারে চট্টগ্রাম গেলেন হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তাকে চট্টগ্রাম ঢুকতে না দিতে সকাল থেকে নগরীর সড়কে অবস্থান নিয়ে আছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। তবে তারও সাত থেকে আট ঘণ্টা আগে পৌঁছে যান তিনি।
তবে খেলাফত মজলিসের ও হেফাজত নেতা এদেরকে এড়াতে গত রাতেই চট্টগ্রাম চলে যান বলে জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
এই সফরকে ঘিরে চট্টগ্রামে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সমর্থন ছাত্র ও যুবলীগ কর্মীরা দুই দিন ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। আগের দিন সমাবেশ করে তারা মামুনুল হককে চট্টগ্রামে সমাবেশ করে মামুনুলকে প্রতিহতের ঘোষণা দেয়।
শুক্রবার সকাল নয়টা থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের প্রবেশমুখ, দেওয়ানহাট, অক্সিজেন মোড়ে সড়কের ওপর অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের শত শত নেতা কর্মী।
চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়কের এক নম্বর গেটে অবস্থান নিয়ে ছাত্র ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ
তবে রাতেই হেফাজত নেতা চট্টগ্রামে চলে যান বলে জানিয়েছেন সংগঠনের আরেক নেতা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। তিনি বলেন, ‘উনি (মামুনুল হক) গত (বৃহস্পতিবার) রাতে সড়কপথে ঢাকা থেকে হাটহাজারীতে এসে পৌঁছেছেন। উনার গাড়ি সিটি গেইট দিয়ে ঢুকে চট্টগ্রাম শহর হয়ে হাটহাজারীতে আসে। উনি মাহফিলে বক্তব্য রাখবেন।’
অন্য একজন হেফাজত নেতা জানান, মামুনুল রাত একটার দিকে বড় মাদরাসা হিসেবে পরিচিত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসায় রাতযাপন করেন।
চট্টগ্রামে হাটহাজারীর পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আল আমিন সংস্থা আয়োজিত এক মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে মামুনুল হকের। এরই মধ্যে এই মাহফিল শুরু হয়েছে।
হেফাজত নেতা হাটহাজারী এসেছেন কি না, এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল হক । নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মামুনুল হক এসেছেন কি না, সেটা আমাদের জানার কথা না। এখানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’
হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশে প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাগরিবের নামাজের পর মামুনুল হক মাহফিলে বক্তব্য রাখবেন। তিনি সঠিক সময়ে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।’
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সেক্রেটারি জাকারিয়া দস্তগীর বিকাল সোয়া পাঁচটার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি মামুনুল হক চট্টগ্রামে চলে এসেছেন। জঙ্গিরা জঙ্গিদের মতো করে পালিয়ে রাতের আঁধারে চলে। সাহস নেই বলে তিনি দিনের আলোতে আসেননি। তবে আমরা এখনও জিইসি মোড়ে অবস্থান করছি। তিনি এলে দেখে নেব।’
মামুনুল হক হুমকি দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ না হলে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো পরিস্থিতি আবার তৈরি করা হবে।
এই বক্তব্য দেয়ার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় মামুনুল হক তার মজলিস করতে পারেননি। শীতকালে এই মজলিসগুলো তার আয়ের একটি বড় উৎস।
তবে হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেছেন, ‘মাহফিলে আমাদের এখানে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আমার এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান দিয়েছে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল। এটি নির্মাণের বিরুদ্ধে সমাবেশ করে ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়ার হুমকিও এসেছে। মামুনুল হকও একই ধরনের কথা বলে প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন।
এই বক্তব্য দেয়ার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় মামুনুল হক তার মজলিস করতে পারেননি। শীতকালে এই মজলিসগুলো তার আয়ের একটি বড় উৎস।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে মামুনুল হক বা ভাস্কর্যবিরোধীদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া না জানালেও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অবশ্য প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কড়া। তিনি ‘মৌলবাদী গোষ্ঠীকে’ বেশি বাড়াবাড়ি না করতে হুঁশিয়ার করে নওফেল বলেছিলেন, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করলে ঘাড় মটকাতে সময় লাগবে না।’
আর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ধোলাইপাড়েরটা হবেই, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর আরও একটি ভাস্কর্য নির্মিত হবে। আর ইসলামী দলগুলোর বক্তব্যের জবাব না দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যেখানে সেখানে যার তার বক্তব্যের জবাব দেন না তারা।