স্পষ্টত দুই ভাগে বিভক্ত ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরামে মান- অভিমান ভুলিয়ে নেতাদের এক করার চেষ্টা চলছে। পাল্টাপাল্টি কাউন্সিলের যে ঘোষণা, তা স্থগিত করা হয়েছে।
তবে এই উদ্যোগে আবার বাদ পড়ে যাচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, যাকে এ পদ দেয়া নিয়ে দলে বিভেদ।
নতুন উদ্যোগের পর দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বে যে নেতারা দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন, তারাও এখন ‘দলীয় ঐক্যের’ কথা বলছেন।
এ নেতারা বলছেন, এখন দলটির ঐক্যবদ্ধ কাউন্সিল করাতেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। আর রেজা কিবরিয়া বলছেন, করোনার কারণে তিনি ভয় পাচ্ছেন। তাই দল থেকে দূরে থাকছেন।
আগামী ২৬ ডিসেম্বর কাউন্সিল করে দলের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেনকে বাদ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বহিষ্কৃত নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন নেতারা।
তবে সম্প্রতি মন্টু কথা বলেছেন ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে। বলেছেন, বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহারের কথা।
নিউজবাংলাকে মন্টু বলেন, ‘আমরা আমাদের বক্তব্য বলে এসেছি। সেটা হলো, দলের বহিষ্কার, পাল্টা বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। ভুল বোঝাবুঝির কারণে দলে বিভাজন হয়েছে এমন একটা বিবৃতি দিতে হবে। আর দলের সম্মেলনের যে দুটো তারিখ হয়েছে, সে দুটো তারিখ স্থগিত করা হবে।’
ড. কামাল কী বলেছেন, জানতে চাইলে মন্টু বলেন, ‘অবশ্যই তিনি এটা করবেন।’
প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর গত অক্টোবরে বিভক্তি দেখা দেয় গণফোরামে। ১৮ অক্টোবর মোস্তফা মহসিন মন্টু, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ থেকে আসা আবু সাইয়িদ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, হেলালউদ্দিন, সুব্রত চৌধুরী, লতিফুল বারী হামিম, খান সিদ্দিকুর রহমান ও আব্দুল হাসিব চৌধুরীকে বহিষ্কার করা হয়।
মন্টুদের বাদ দিয়ে ১২ ডিসেম্বর কাউন্সিলের ঘোষণা দেয়া হয়, যাতে সায় ছিল ড. কামাল হোসেনের।
মন্টুর নেতৃত্বে দলের কয়েকজন নেতা এ আদেশ না মেনে ২৬ ডিসেম্বর আলাদা কাউন্সিলের ঘোষণা দেন।
গণফোরামে এই বিভেদের শুরু রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করার পর। আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে গত জাতীয় নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে চমক তৈরি করেন।
পরে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত সহকর্মী মন্টুকে বাদ দিয়ে রেজা কিবরিয়াকে ডেপুটি করেন কামাল হোসেন। আর এ নিয়ে দলে ভেতরে ভেতরে বিভক্তি একপর্যায়ে প্রকাশ্যে চলে আসে।
মন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিভাজন শেষ করতে দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন সাহেব মনে হচ্ছে আন্তরিক। দলের মধ্যে বিভিন্ন মত তো থাকতেই পারে।’
দলে বর্তমান বিভাজন নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভাজন আছে। তবে আমরা অধিকাংশই চাই যে ঐক্য হয়ে যাক।’
রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্টু বলেন, ‘আমরা কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিবরিয়া সাহেব বা অন্য কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছি না।’
ঐক্য সৃষ্টিতে রেজা কিবরিয়া কোনো বাধা হবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না। তবে হওয়া উচিত না। কারণ তার নিজেরও উপলব্ধি এসেছে।’
আগামী ২৬ ডিসেম্বর ঘোষিত কাউন্সিল প্রসঙ্গে মন্টু বলেন, ‘যেহেতু কথা হয়েছে উনি (ড. কামাল) একটা বিবৃতি দেবেন, একটা যে অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছে, সেটা প্রত্যাহার করে নিলে আমরা কাউন্সিল স্থগিত করে দেব।’
‘রেজা কিবরিয়া কী ভাবছেন?’
নিউজবাংলাকে রেজা বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে দলের নেতা ও সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান উনাদের (মন্টুসহ বহিষ্কৃত নেতাদের) সঙ্গে বসেছেন। এ ব্যাপারে উনি বলতে পারবেন যে কী আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি ডিল করছি না।’
‘এখন আমরা যেটা করেছি, সেটা হলো আগামী ১২ ডিসেম্বর আমাদের কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল; ওটা বাদ দিয়েছি। আলোচনার ভিত্তিতে একটা নতুন তারিখ ঠিক হবে’, বলেন রেজা কিবরিয়া।
মোকাব্বির খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলের মধ্য দ্বন্দ্ব নিরসন করতে দুই-তিন সপ্তাহ আগে আমরা আলোচনায় বসেছিলাম। পরে আমি ও মন্টু সাহেব সব আমরা দলের সভাপতির সঙ্গে বসেছিলাম। আমরা একমত হয়েই স্যারের (ড. কামাল) বাসায় গিয়েছিলাম। বলেছি পৃথকভাবে কাউন্সিল না করে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবেই কাউন্সিল করব। এতে স্যার (ড. কামাল) খুশি হয়েছেন।’