জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে হাত পড়লে সে হাত গুড়িয়ে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে একটি কর্মসূচি থেকে।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতার ভাস্কর্য নির্মাণ করা হচ্ছে। এর বিরোধিতা করে ধর্মভিত্তিক একটি দলের পক্ষে থেকে আসা ‘আপত্তিকর’ বক্তব্যের জবাবে শুক্রবার এই হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
এক সপ্তাহ আগে ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশ থেকে আসা বক্তব্যের প্রতিবাদে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের বিক্ষোভ। ছবি: নিউজবাংলা
ইসলামী আন্দোলনের ওই সমাবেশে দাবি ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে বলা হয়, তাদের কথা না শুনলে এই স্থাপনা বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হবে।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ঢাকা মহানগর সভাপতি বেলাল শাহ বলেন, ‘ফাউন্ডেশনের নেতারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাহারা দেবে। যারা এই ভাস্কর্যের গায়ে হাত দেবে তাদের হাত গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। এসব মৌলবাদীদের দেশের সব জায়গাতে প্রতিহত করা হবে।’
আওয়ামী লীগ ইসলামী আন্দোলনের বক্তব্যের আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জবাব না দিলেও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করবে, জনগণ তাদের ঘাড় মটকে দেবে।
ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দল বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ ঠেকাতে যে কর্মসূচি পালন করেছে তা সরকারের নমনীয়তার ফল বলে মনে করছে আওয়ামী লীগের জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ।
দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্য স্থানান্তরিত করার মধ্য দিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ীদের আশকারা দেওয়ার ফলেই আজ এই অপশক্তি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করার দুঃসাহস দেখাতে পারছে।’
চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের এক মানববন্ধনে বলা হয়েছে, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় যদি থাকতে হয়, তাহলে বঙ্গবন্ধুর সব ভাস্কর্যে স্যালুট দিয়ে চলতে হবে। না হলে পাকিস্তানে চলে যেতে পারো।’
ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাধীন ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। ছবি: নিউজবাংলা
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ধোলাইপাড়ে ভাস্কর্য হবেই, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও হবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য।
ইসলামী আন্দোলনের বক্তব্যকে যে সরকার পাত্তা দিচ্ছে না, সেটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাস্তাঘাটে এখানে-সেখানে কারও কোনো কথা আমলে নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হবেই।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন, ধোলাইপাড়ে হবেই, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও হবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি মশিউর মালেক বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছে, তারা ক্ষমা না চাইলে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহের মামলা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরেও এখনও দেশে পাকিস্তানপন্থি কিছু লোক রয়ে গেছে। দরকার হলে আমরা তাদেরকে দেশে থেকে বের করে দেব।’
ইসলামী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে সুপ্রিম কোর্টের সামনের এই ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক উল্লেখ করে মশিউর বলেন, ‘তার আজীবনের লড়াই সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই ইতিহাস জানাতে বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতার ভাস্কর্য দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করতে হবে।’