সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী এনে সব দল বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল গঠনের উদ্দেশ্য কী ছিল, সংসদকে আবার জানালেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শত বার্ষিকীতে বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্রিটিশ বা পাকিস্তানি সিস্টেমের পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন। তিনি ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে ক্ষমতা জনগণের হাতে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন।’
সংবিধানের চতুর্থ সংশোধন করে বাকশাল বিল পাসের সময় সংসদে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষণ বাজানো হয়।
এর আগে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে ২৫ জানুয়ারি যখন তিনি সংবিধান সংশোধন করেন, তখন যে ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন, সেটা আমরা শুনতে চাই। সমস্ত জাতির এটা শোনা দরকার তিনি কেনো এটা করেছিলেন, কিসের জন্য করতে চেয়েছিলেন, তাঁর উদ্দেশ্যটা কী ছিল, তাঁর লক্ষ্যটা কী ছিল, আর তাতে জাতি কীভাবে উপকৃত হতো।’
তবে বাকশাল ব্যবস্থা কায়েম করে যেতে পারেননি বঙ্গবন্ধু। তাকে হত্যার পর এই বিষয়টি আর এগিয়ে নেয়া হয়নি। উল্টো বঙ্গবন্ধুর বদনাম করেছে তাকে যারা হত্যা করেছে তারা।
প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) যে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন, যেটা পরে আর কেউ জানার সুযোগ পায়নি। তাকে সেই সুযোগ দেয়া হয়নি।
‘১৫ আগস্ট তাকে হত্যা করা হলো এবং বলা হলো তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চেয়েছিলেন, রাজতন্ত্র চেয়েছিলেন, ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেয়েছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে মানুষটা তার জীবনের সবটুকু বিসর্জন দিয়েছিলেন একটি জাতির জন্য, কোনো আরাম আয়েশের দিকে তাকাননি, বারবার নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন একটা জনগোষ্ঠীর জন্য, তাদের একটা স্বতন্ত্র পরিচয় দেয়ার জন্য, তিনি কেন ক্ষমতার লোভ করবেন?’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘তার (জাতির জনক) যদি ক্ষমতার লোভ থাকতো তবে তিনি অনেকবার ক্ষমতায় যেতে পারতেন। যখন যে আসছেন তাকে তো মন্ত্রী বানাবেন, ক্ষমতা দেবেন সেটাই চেয়েছেন।’
বঙ্গবন্ধুর বাকশাল করার উদ্দেশ্য বর্ণনা করে সংসদ নেতা বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) দল-মত নির্বিশেষে সকল মানুষকে নিয়ে যারা রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে যুক্ত ছিলেন, তাদের নিয়ে একটা ঐক্য গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। একটা জাতীয় ঐক্য।
‘সেই জাতীয় ঐক্যের উদ্দেশ্য ছিল উৎপাদন বৃদ্ধি করা, দেশকে সমৃদ্ধশালী করা দ্রুততার সঙ্গে। আর এর জন্য তিনি ক্ষমতা একদম বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূলে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন।’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার ইতিহাস পর্যন্ত মুছে ফেলা হয়েছিল জানিয়ে জাতির পিতার কন্যা বলেন, ‘তার ঐতিহাসিক ভাষণগুলো বাজানো হতো না। তাঁর নামটা পর্যন্ত রাখা হতো না। তাঁর বিরুদ্ধে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের রটনা করা হয়েছিলো। কিন্তু মানুষ এই ভাষগুলোর মধ্য দিয়ে অনেক সত্য জানতে পেরেছে।’
স্কুল খুলে ঝুঁকি নিতে চাই না
এর আগে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের করোনা মহামারির মধ্যে স্কুল খুলে দেয়ার আহ্বান জানান।
এর জবাবে এই বক্তব্য সরাসরি নাকচ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তিনি স্কুল খোলার কথা বলেছেন। আমেরিকায় কিন্তু স্কুল খুলে দিয়েছিল একটা পর্যায়ে। তারপর তারা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। ইউরোপেও এমন ঘটনা ঘটে। তার কারণ সেখানে ব্যাপক হারে (করোনা সংক্রমণ) বেড়ে যায়।’
করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব বন্ধ আছে। ১৪ নভেম্বরের পর সীমিত পরিসরে স্কুল কলেজ খুলে নেয়ার বিষয়ে আলোচনাও করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম, এই যে বাচ্চারা স্কুলে যাবে তাদের অবিভাবকরা যাবে, এটা একটা সংক্রামক ব্যাধি যার ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। সেখানে এই ঝুঁকি আমরা কেন নেব?
স্কুলে না যেতে পেরে বাচ্চাদের মন খারাপ হচ্ছে বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সবাই সুখি পরিবার করতে গিয়ে বাচ্চাকে ঘরে নিয়ে একক ভাবে থাকে। আগে একান্নবর্তী পরিবার ছিলো। এখন সেই সুযোগ কম। বাচ্চাদের খুব কষ্ট। তাঁর পরেও তাদের তো মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারি না।’
স্কুলে সবাইকে পাস করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এটা ইংল্যান্ড দিয়েছে, অন্য দেশও দিয়েছে। অটো প্রমোশনে যে এমন একটা খুব ক্ষতি হয়ে গেল তা কিন্তু না।’
ইউরোপ আমেরিকায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ নিয়েও উদ্বেগ জানান সরকার প্রধান। বলেন, ‘গতবার হঠাৎ করে আসায় অনেক কিছু ব্যাহত হয়েছে। কিন্তু আবার আমরা আরও বেশি প্রস্তুতি নিয়েছি। যে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে, যেটা নিয়ে রিসার্চ চলছে তা আমরা আগাম বুকিং দিয়েছি।’
মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনে নয়টা বিল হয়েছে বলেও জানান সংসদ নেতা। বলেন, ‘এত অল্প সময়ে এত বিল পাস করাও অনেক টাফ ব্যাপার। আমরা করেছি।
‘এক তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত মুজিব বর্ষ নিয়ে আলোচলে চলেছে। তার পরে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।’