ফরিদপুর-৪ আসনের আলোচিত সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। তাকে সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে।
গত বছর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর যুবলীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হয়। এর প্রায় এক বছর পর ঘোষণা করা হলো পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে হস্তান্তর করেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে গত দুটি সংসদ নির্বাচনে নিক্সন চৌধুরী নৌকা মার্কার প্রার্থী কাজী জাফর উল্লাহকে হারিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
শনিবার যুবলীগের ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে নিক্সন চৌধুরীকে সভাপতিমণ্ডলীর সাত নম্বর সদস্য করা হয়।
সম্প্রতি নিক্সন চৌধুরী আলোচনায় এসেছেন এক সরকারি কর্মকর্তাকে ফোন করে গালাগাল ও ‘ভয় দেখানোর’ ঘটনায়।
গত ১০ অক্টোবর ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা উপনির্বাচনে ভোটের দিন ভাঙার এসি (ল্যান্ড) আল আমিন মিয়াকে গালাগাল করার অভিযোগ ওঠে নিক্সনের বিরুদ্ধে। তিনি ফরিদপুরের ডিসিকে নিয়ে কটূ কথা বলেন বলেও অভিযোগ ওঠে।আরও পড়ুন : যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যারা আছেন
এ নিয়ে একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে ফেসবুকে। বলা হচ্ছে, ভাঙ্গার ইউএনও জেসমিন সুলতানার মোবাইলে কল দিয়ে গালাগাল করেছেন নিক্সন।
নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙের অভিযোগে ১৫ অক্টোবর ফরিপুরের চরভদ্রাসন থানায় নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম।
গত ২০ অক্টোবর নিক্সন চৌধুরীকে ‘প্রশাসনকে ভয়ভীতি না দেখানো ও তদন্ত কর্মকর্তাকে সহায়তা করার শর্তে ট সপ্তাহের জামিন দেয় হাই কোর্ট।
আর যারা সদস্য
নিক্সন চৌধুরী ছাড়া সংগঠনে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে আছেন মামুনুর রশিদ, মঞ্জুর আলম শাহীন, আবু আহমেদ নাসিম পাভেল, শেখ সোহেল উদ্দিন, খালেদ শওকত আলী, শেখ ফজলে ফাহিম এবং দুই সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং ও সেলিম আলতাফ জর্জ।
এদের মধ্যে শেখ সোহেল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিনের ভাই। আর শেখ ফাহিম সংগঠনের সাবেক সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলে।
সভাপতিমণ্ডলীর একটি পদ এখনও ফাঁকা রাখা আছে।
যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে সামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের হাতে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তালিকা তুলে দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ছবি: নিউজবাংলা
শেখ সেলিমের ছেলে শেখ ফজলে নাঈমও কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। তিনি সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
ছাত্রলীগের সাবেক বেশ কয়েকজন নেতা যুবলীগে স্থান পেয়েছেন। এদের মধ্যে সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ হয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক।
ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জয়দেব নন্দী পেয়েছেন প্রচার সম্পাদকের পদ।
ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাসসুল কবির রাহাত হয়েছেন উপ জনশক্তি ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক।
ছাত্রলীগের সাবেক দফতর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদাকে করা হয়েছে উপ দফতর সম্পাদক।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম জাতীয় সম্মেলন হয়। তখন তিন বছরের জন্য নেতৃত্বে আসেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে সামস পরশ।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর শেখ ফজলুল হক মনি গঠন করে যুবলীগ। ১৯৭৪ সালে যুবলীগের প্রথম কংগ্রেসে তিনিই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তারই ছেলের হাতে এখন যুবলীগের নেতৃত্ব।
২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা
সর্বশেষ ২০১২ সালে ষষ্ঠ কংগ্রেসে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান শেখ সেলিমের ভগ্নিপতি ওমর ফারুক। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর যুবলীগের সভাপতির পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
তখনও কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের এক বছর পর করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সেই কমিটির বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগ উঠার পর তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।