জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, যে আশা নিয়ে নূর হোসেন আত্মদান করেছেন, তা পূরণ হয়নি।
মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির (জাপা) বনানী কার্যালয়ে গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লেখা স্লোগান নিয়ে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেন তরুণ নূর হোসেন।
সেদিন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত হন নূরসহ তিন জন। এ ঘটনায় এইচএম এরশাদের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয় গোটা দেশ।
ওই ঘটনার তিন দশক পর এরশাদের ভাই জিএম কাদের বলেন, “নূর হোসেন হয়তো চেয়েছিলেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলের গণতন্ত্রের চেয়ে আরও ভালো গণতন্ত্র পাবে দেশ। এই আশায় বুকে ও পিঠে লিখেছিলেন, ‘স্বৈরতন্ত্র নিপাক যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’।”
ওই সময় গণতন্ত্র মুক্তি পেয়েছে কি না, সে প্রশ্ন করেন বিরোধী দলীয় উপনেতা।
তিনি বলেন, ‘তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর করেন। কিন্তু ৯১ সালের নির্বাচনের পর তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করে সংসদীয় পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়।’
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সমালোচনা করে জি এম কাদের বলেন, “এ অনুচ্ছেদ সংসদীয় পদ্ধতির মূল স্বাদ নষ্ট করেছে। ফলে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। এতে স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক না হয়ে ‘স্বৈরতন্ত্র মুক্তি পাক ও গণতন্ত্র নিপাত যাক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দল থেকে পদত্যাগ করলে বা সংসদে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিলে তার আসন শূন্য হয়ে যাবে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘সংসদীয় পদ্ধতিতে সংসদের কাছে সরকার ও সরকারপ্রধানের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে সংসদ। কিন্তু ৭০ ধারার কারণে উল্টো হয়েছে; সরকারই সংসদকে নিয়ন্ত্রণ করছেন।’
বিরোধী দলীয় উপনেতার মতে, সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বাদ পেতে হলে সংবিধান থেকে ৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেয়া উচিত।
কাদের বলেন, ‘গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের তন্ত্র। এতে জনগণের শাসন নিশ্চিত হয়। তাই বিতর্কিত ধারা তুলে দেয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ থাকব। প্রতি বছর গণতন্ত্র দিবসে এই হবে আমাদের অঙ্গীকার।’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘গণতন্ত্র আজ সোনার হরিণ; গণতন্ত্র আজ খাঁচায় বন্দি।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টিই পারবে প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে।’
বাবলু বলেন, জাতীয় পার্টি ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে। আগামী নির্বাচনে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার সরকার গঠন করবে।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাপার কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস.এম. ফয়সল চিশতীসহ আরও অনেকে।