জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীতে রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের আশা করছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে মুজিব বর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে দেয়া স্মারক বক্তৃতায় এই আশার কথা বলেন রাষ্ট্রপতি।
একাদশ সংসদের এই অধিবেশন শুরু হয় রোববার। প্রথম দিন সংসদে চলে স্বাভাবিক কার্যক্রম। বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হয় সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায়।
অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি সংসদ কক্ষে প্রবেশের পর জাতীয় সংগীত প্রচার করা হয়। স্পিকারের ডান পাশে লাল গদি মোড়া চেয়ারে বসেন রাষ্ট্রপতি। আসন নেওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর দেওয়া ভাষণের ভিডিও সংসদ কক্ষে দেখান হয়।
এ সময় আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা; কয়েকবার তাকে চোখ মুছতেও দেখা যায়।
অসুস্থ থাকায় বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন না। ছিলেন বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। বিএনপির সংসদ সদস্যদের মধ্যে ছিলেন হারুন অর রশীদ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সাধারণ হতদরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে দলমত নির্বিশেষে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারলে দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। মুজিববর্ষে এটাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।’
রাষ্ট্রপতি জনগণের, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যে ঐক্য একাত্তরে আমাদেরকে এক করেছিল, সেই ঐক্যই গড়ে তুলতে হবে সাম্প্রদায়িকতা, অগণতান্ত্রিকতা, অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে।
‘গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’
যারা বাস্তবকে অস্বীকার করে কল্পিত কাহিনি ও পরিস্থিতি বানিয়ে দেশের সরলপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করে দেশের শান্তি ও অগ্রগতির ধারাকে ব্যাহত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথাও বলেন রাষ্ট্রপতি।
বলেন, ‘তাহলেই প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, সার্থক হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশকে জানতে হলে, বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে।
বঙ্গবন্ধুকে সারা বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের ‘মুক্তির আলোকবর্তিকা’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মুজিববর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম, চিন্তা-চেতনা ও দর্শন ছড়িয়ে দিতে হবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে।’
জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীমূলক স্মারকগ্রন্থ উপহার দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ছবি: পিআইডি
বঙ্গবন্ধুর জীবন ভাবনা ও রাজনৈতিক দর্শনের মর্মার্থ সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে মুজিববর্ষ পালন একটি যথাযথ পদক্ষেপ বলেও মনে করেন আবদুল হামিদ।
সংসদের এই বিশেষ অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পারাকে ‘অত্যন্ত গৌরবের’ ও ‘জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি’ হিসেবেও তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি।
মুজিববর্ষে সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে গৃহহীন-আশ্রয়হীনদের ঘর তৈরির কাজ হাতে নেয়া, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়াসহ নানা উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি।
বলেন, ‘এসব কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে যাব।’
বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে’ বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া নিয়েও কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। বলেন, বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই আরাধ্য কাজ সম্পন্ন করেছেন।’
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকে সরকারের ‘অন্যতম কৃতিত্ব’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এখনো চলমান। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এ বিচার অন্যতম মাইলফলক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।’
সরকারের ‘সময়োচিত সাহসী সিদ্ধান্ত’ এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করে যাচ্ছে বলেও মনে করেন রাষ্ট্রপতি।
সরকার যথাসময়ে ভ্যাকসিন পাওয়ার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেন সসম্মানে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে, সে জন্য জাতিসংঘকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ারও আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মাঝে সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ান। ভাষণ শেষ হলে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন সাবেক প্রধান হুইপ আসম ফিরোজ। অন্য সংসদ সদস্যরাও স্লেগানের জবাব দেন।