১৯৭৫ সালের বিয়োগান্তক ঘটনাগুলোর তদন্তে কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে ওই ঘটনার অন্যতম অংশীদার জাসদ।
৪৫ বছর আগের ঘটনাপ্রবাহের প্রকৃত তথ্য উদঘাটনে প্রস্তাবিত কমিটির নাম দেয়া হয়েছে ‘জাতীয় সত্য উদঘাটন কমিশন।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে ও ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্যে ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন জিয়াউর রহমান। এরপর তিনি উর্দি পরা অবস্থায় হন রাষ্ট্রপতি।
সেদিন সেনাবাহিনীর সৈনিকদের নিয়ে ‘বিপ্লব’ করতে চেয়েছিল সে সময় আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদ। তবে ‘বিপ্লব’ হাতছাড়া হয়ে যায় জিয়াউর রহমানের হাতে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ক্ষমতায় এসে জাসদের ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার’ প্রধান কর্নেল আবু তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলান কোর্ট মার্শাল করে। বহু বছর পর উচ্চ আদালত এই দণ্ডকে অবৈধ ঘোষণা করে।
যদিও এর আগে জিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন তাহের।
৭ নভেম্বরের দিনটিকে বিএনপি পালন করে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে’। আওয়ামী লীগ ও সমমনারা এটি পালন করে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে। আজ জাসদ এটি পালন করে ‘সিপাহী জনতার অভ্যুত্থান' দিবস হিসেবে।
দিবসটি স্মরণে শনিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে জাসদ। এর আগে কর্নেল তাহেরের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
সভায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা, ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতা হত্যা, ৭ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ হত্যা, জিয়ার শাসনামলে কর্নেল তাহেরকে সাজানো মামলায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা, সেনানিবাসগুলোতে শত শত অফিসার-সৈনিক হত্যার ঘটনার তদন্তে ‘জাতীয় সত্য উদঘাটন কমিশন’ গঠনের আহ্বান জানান জাসদ সভাপতি ইনু।
৭৫ সালের বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে জাসদ সভাপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার পর ৭ নভেম্বর ইতিহাসের গতি পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিল জাসদ। কিন্তু জিয়াউর রহমানের কারণে তা হয়নি।
ইনু বলেন, ‘জিয়া ও তার সহযোগী পাকিস্তান ফেরত পাকিস্তানপন্থী অফিসার এবং দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী সেই মহান বিপ্লবী প্রচেষ্টাকে দমন করে দেশকে পাকিস্তানপন্থা ও চরম প্রতিক্রিয়াশীলতার দিকে ঠেলে দেয়। জিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি মুক্তিযুদ্ধে তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে শুরু করে।’
পাকিস্তানপন্থা থেকে দেশ আবার মুক্তিযুদ্ধের পথে ফিরতে শুরু করেছে বলেও মনে করেন ইনু। বলেন, ‘কিন্তু এখনও পাকিস্তানপন্থার রাজনীতির ধারক-বাহক বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সঙ্গী জঙ্গিবাদী-উগ্রবাদীরা এখনও বাংলাদেশ রাষ্ট্র, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধকে চ্যালেঞ্জ করছে।’
কর্নেল তাহেরের ভাই আনোয়ার হোসেন, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর হোসাইন আখতার প্রমুখ এ সময় বক্তব্য রাখেন।