করোনা চিকিৎসায় প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার মোহাম্মদ সাহেদ কীভাবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নাম লিখিয়েছিলেন, সেটি এখনও স্পষ্ট হয়নি।
তবে এই অভিজ্ঞতা থেকে সতর্ক হতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। সাহেদের মতো আর কারা স্বার্থ হাসিলে নানা কৌশলে দলে ঢুকে পড়েছে, সেটি খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
‘অনুপ্রবেশকারী’ কাউকে পাওয়া গেলে তার দায় ওই কমিটির সম্পাদককে নিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমনকি যিনি সুপারিশ করবেন, ব্যবস্থা নেয়া হবে তার বিরুদ্ধেও।
এরই মধ্যে বিতর্কিত বা অন্য রাজনৈতিক আদর্শের কারা দলে ঢুকে পড়েছেন, তাদের খুঁজে বের করে বাদ দেয়া হবে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের গণভবনে ডেকেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে এই বৈঠক হতে যাচ্ছে শনিবার সকালে।
টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের কমিটিগুলোতে অনুপ্রবেশকারী শব্দটি সম্প্রতি বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। কেন্দ্রে তো আছেই, জেলা পর্যায়ে কমিটিগুলোতে এই অভিযোগ আরও বেশি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে আমাদের বলয়ের বাইরে থেকে অনুপ্রবেশ করেছে তাকে বাদ দেয়া এবং ত্যাগী পরীক্ষিত কোনো নেতা-কর্মী যদি বাদ যায়, তাকে অন্তর্ভুক্ত করা আমাদের উদ্দেশ্য।’
বিতর্কিত কেউ ঢুকলে দায় সম্পাদকের
মোহাম্মদ সাহেদ ঢুকেছিলেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটিতে। কার মাধ্যমে এটা হয়েছিল, তার দায় নিচ্ছেন না কেউ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপকমিটিতে কোনোভাবে বিতর্কিত কেউ ঢুকে পড়লে এর দায় ওই কমিটির সম্পাদককে ও সুপারিশকারীকে নিতে হবে।’
২০০৯ সালের আগে আওয়ামী লীগের বিভাগ বা বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি ছিল না। ওই বছর ১৮তম জাতীয় সম্মেলনে প্রতিটি সম্পাদকীয় পদের সঙ্গে পাঁচজন সহ-সম্পাদক নিয়ে ওই বিষয়ে একটি করে উপকমিটি করার বিধান করা হয়।
পরের সম্মেলনে প্রতিটি বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকীয় পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ পাঁচ জনকে বিবেচনায় রেখে ৯৫ জন সহসম্পাদক রাখার বিধান রাখা হয়।
এবার শুরু হয় সহসম্পাদক পদের সদস্য সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক। ২০১৬ সালে উপকমিটিতে সহসম্পাদক পদ নিয়ে সমালোচনা বড় আকার ধারন করে। বিষয়ভিত্তিক ৪১৬ জনকে সহসম্পাদক পদ দেওয়া হয়। তখন বলা হয়েছিল, এর সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।
সাহেদকাণ্ডের পর দলের বিষয়ভিত্তিক উপকমিটির আকার ৩৫ জনে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। এর আগে এই উপকমিটির সংখ্যা কত ছিল, সে বিষয়ে বলতে পারতেন না খোদ দলের দপ্তর সম্পাদক। সংখ্যা অনির্দিষ্ট থাকায় কমিটিতে নানা কৌশলে নাম লেখানোর সুযোগ ছিল। আর বিতর্কিত একাধিক ব্যক্তি দলের উপকমিটির সদস্য হয়ে দলের জন্য বদনাম বয়ে এনেছেন।
জেলা কমিটি যাচাই-বাছাই করবেন শেখ হাসিনা
জেলা কমিটিতেও বিতর্কিত কারা ঢুকে পড়েছেন, তাদের বিষয়ে তথ্য চেয়েছেন শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদের একটি তালিকা করা হয়েছে। এটি তাকে দেয়া হবে।
কমিটি যাচাই-বাছাইয়ে কত দিন সময় লাগতে পারে এ বিষয়ে এক প্রশ্নে আবদুর রহমান বলেন, ‘এটা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল।’
অভিযোগ আছে জেলা কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা বাকি নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় না করেই পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া কেন্দ্রে জমা দেন। আর তখন অর্থের বিনিময়ে পদ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, নিজের অনুসারীদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদে জায়গা দেয়ার অভিযোগ ওঠে।
দলের এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হয়েছেন শেখ হাসিনা। তাই তিনি নিজেই এবার জেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো দেখছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, ‘যেসব কমিটি ইতিমধ্যে জমা দেয়া হয়েছে, সেগুলো এখনই ঘোষণা করা হবে না, যাচাই বাছাই করে পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের নাম তালিকায় আছে কি-না, তা দেখা হবে।’
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘জামায়াতের কোনো স্তরের নেতাকর্মী কমিটিতে ঢুকে পড়ল কি-না, তা কঠোরভাবে দেখা হবে।’
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বিতর্কিতদের যাতে এবার এড়ানো যায়, সে বিষয়ে আমরা অত্যন্ত সতর্ক। কমিটিগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে। কোনো অভিযোগ এলে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দলীয় প্রধানের কাছে পেশ করা হবে। আমরা যাচাই-বাছাইয়ের ব্যাপারে খুবই সতর্ক।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘হাইব্রিড বা অভিযুক্তদের দলে প্রবেশের আর সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।’