রাজধানীতে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি আঁকার সময় ছাত্র ইউনিয়নের দুই জন নেতাকে ধরে নিয়ে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
এদের একজন বলেছেন, পুলিশ আটকে রেখে তাদের নির্যাতন করেছে। এই অভিযোগ অস্বীকার করে বাহিনীটি বলেছে, অসদাচরণ করায় দুই জনকে কিছুক্ষণ থানায় আটকে রেখেছিলেন তারা।
ছাত্র ইউনিয়ন জানায়, গত রাত দুইটার দিকে বেইলি রোডের ভিকারুন্নিসা স্কুলের দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকছিলেন তাদের কয়েকজন কর্মী। এ সময় রমনা থানার এস আই মহিবুল্লাহ’র নেতৃত্বে পুলিশের একটি টহল উপস্থিত হয়। তারা গ্রাফিতি আঁকতে বাঁধা দেয়।
বাক বিতণ্ডার এক পর্যায়ে ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতা জহর লাল রায় ও সাদাত মাহমুদকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখার পর ভোরে ছেড়ে দেয়া হয় তাদের।
সম্প্রতি বেশ কিছু ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দল বেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে, খাগড়াছড়ি মানসিক প্রতিবন্ধী পাহাড়ি তরুণীকেও ধর্ষণের অভিযোগ ঘটেছে।
সিলেটের ঘটনাটিতে নাম এসেছে ছাত্রলীগের একাধিক কর্মীর। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এই ঘটনার বিচার দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছে। এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন নয় আসামির ছয় জন। এই প্রেক্ষিতেই ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি আঁকছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা।
এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
নাজিফা জান্নাত নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা ভিডিওটিতে দেখা যায়, বেইলি রোডে ভিকারুন্নিসা স্কুলের দেয়ালের পাশে এক তরুণের পরিচয় জিজ্ঞেস করছেন রমনা থানার এস আই মহিবুল্লাহ। ঐ তরুণ নিজেকে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর সংসদের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক বলে পরিচয় দেন।
ঘটনাটি এস আই মহিবুল্লাহ তার মোবাইল ফোনে ধারণ করছিলেন।
এর পরে মহিবুল্লাহ ও সাদাত তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে মহিবুল্লাহ সাদাতের ঘাড় ধরে তাকে গাড়িতে ওঠানোর চেষ্টা করেন। এ সময় উপস্থিত জহর পুলিশকে গায়ে হাত দিতে নিষেধ করেন। স্বেচ্ছায় গাড়িতে উঠতে চাইলেও তাদের টানাহেঁচড়া করে গাড়িতে তোলে পুলিশ সদস্যরা।
সাদাত মাহমুদ বলেন, ধর্ষণের প্রতিবাদ জানিয়ে তারা ভিকারুন্নিসা স্কুলের পাশের দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকছিলেন। এসময় পুলিশের একটি টহল গাড়ি সেখানে আসে। তিনি বলেন, ‘রমনা থানার এস আই মহিবুল্লাহ’র নেতৃত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত নারীকর্মীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এর প্রতিবাদ করলে তারা গ্রাফিতি আঁকায় বাধা দেন।‘ সাদাতের অভিযোগ, পুলিশ তাদেরকে থানায় একটি অন্ধকার কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে।
রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, 'পুলিশের সাথে অসদাচরণের অভিযোগে তাদেরকে আটক করা হয়েছিল। পরে তাদের নেতারা এসে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন।'
নারীকর্মীদের উদ্দেশ্যে আপত্তিকর মন্তব্যের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি।‘
নির্যাতনের অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, 'এই কথার কোন ভিত্তি নেই।'
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় বলেন, ‘গ্রাফিতি আঁকার সময় উপস্থিত নারী কর্মীদের উদ্দেশ্যেও আপত্তিকর মন্তব্য করেছে পুলিশ। দুইজন নেতাকে আটকের খবর শুনে আমাদের কর্মীরা থানা ঘেরাও করে। পরে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।‘ নির্যাতনের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানান অনিক রায়।