১৯৪৭ সালে সবে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হলো উপমহাদেশ। সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া রাষ্ট্র পাকিস্তানের পূর্ব অংশের গোপালগঞ্জে ২৮ সেপ্টেম্বর জন্ম নিল এক মেয়ে শিশু। নাম রাখা হলো শেখ হাসিনা।
আনন্দ, সংগ্রাম, বেদনাবিধূর নানা ঘটনাপ্রবাহের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী তিনি; সব মিলিয়ে চারবার। ৭৪ বছর বয়সে এসে বাংলাদেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় শেখ হাসিনা।
নিজের অর্জনেই ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তবে আরও একটি পরিচয় তাকে বড় করে তোলে; জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে তিনি।
বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্মদিনে তার অনুসারী ভক্তরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান। যদিও বাবার মতোই শেখ হাসিনা কখনো আড়ম্বরের সঙ্গে জন্মদিন পালন করেন না।
শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। শিশু বয়সেই চলে আসেন ঢাকায়। বড় হয়ে উঠা এখানেই।
ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে জড়ান মুজিবকন্যা। পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে রাখেন সক্রিয় ভূমিকা। তবে রাজনীতির পাদপ্রদীপে আসেন ১৯৮১ সালে, বাংলাদেশের ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ছয় বছর পর।
১৯৭৫ সালে বাবা বঙ্গবন্ধু, মা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তিন ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, চাচা, ফুপুসহ স্বজনদের হত্যাযজ্ঞের রাতে বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি। ছয় বছর পর দেশে ফেরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে।
টানা ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়া রাজনৈতিক দলের প্রধানের পাশাপাশি পালন করছেন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব। দুটি সামরিক সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে রাজনীতিতে হয়েছেন পরিপক্ব।
১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিয়ে হন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। সেনাশাসক এরশাদ পতনের পর ১৯৯১ সালে গণতন্ত্রে ফেরা দেশেও সংসদে একই ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৬ সালে হন প্রধানমন্ত্রী।
প্রথম কোনো সরকারের পাঁচ বছর টিকে থাকার প্রথম; বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রথম নজিরও রাখেন শেখ হাসিনা। টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীও হন তিনি।
১৯৯৬ সালের পর ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের পর সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পান বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার শাসনামলেই নিম্ন আয়ের দেশের তকমা থেকে বের হয়ে মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণের শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্বীকৃতি পেয়েছেন একাধিক। প্রশংসিত হয়েছেন নানা উদ্যোগের কারণে; পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার।
সরকার প্রধান
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে ফেরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ জুন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে জিতে পরের বছর ১২ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তারপর টানা তৃতীয় মেয়াদে এখন সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
বিএনপির বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জিতে এসে ওই মাসের ১২ জানুয়ারি তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ওই নির্বাচন বর্জন করলেও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। তবে ভোটের ফলে কোনো হেরফের হয়নি। আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন চতুর্থবারের মতো।
ব্যক্তিগত জীবন
শেখ হাসিনা মাধ্যমিক বা মেট্রিক পাস করেন ঢাকার আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে। এরপর ভর্তি হন সে সময়ের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজে (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়)। স্নাতক পাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
দুই সন্তানের জননী শেখ হাসিনা। ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে বিয়ে করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় ২৭ জুলাই জন্ম হয় প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্ম নেয় কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
ঘটা করে জন্মদিন কখনো শেখ হাসিনা পালন করে না। এবারও তার অন্যথা হবে না। দলের পক্ষ থেকে ঘটা করে কোনো আয়োজন করতে নিষেধ করা হয়েছে।
তবে দলের কিছু কর্মসূচি থাকছে। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সোমবার বিকাল বিকাল সাড়ে তিনটায় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সীমিত সংখ্যক নেতার অংশগ্রহণে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে।
এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বাদ জোহর এবং দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে। এছাড়া সব গির্জা, বৌদ্ধ বিহার এবং মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকাসহ সারাদেশে সকল সহযোগী সংগঠন আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীও থাকছে। করোনাকালে এসব কর্মসূচি যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে করতে বলা হয়েছে।
ভারত ও চীনের শুভেচ্ছা
বাসস জানায়, জন্মদিন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছা হিসেবে পাঠানো একটি চিঠি ও একটি ফুলের তোড়া হস্তান্তর করেন।
চিঠিতে সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘আপনার (শেখ হাসিনা) দূরদর্শী নেতৃত্ব বাংলাদেশকে ব্যাপক সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনে সহায়তা করেছে এবং সমানভাবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনার অবদান অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)। সিপিসির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী সং তাও এক চিঠিতে বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।