মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌর প্রশাসনের জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে পৌরসভাটির চিত্র। প্রাণ ফিরে পেয়েছে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও বাজার উন্নয়নের কার্যক্রম। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকাসহ ভানুগাছ বাজারের স্থানীয় উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা তাদের অর্থ দিয়ে নির্মাণ করেছেন দোকানকোটা। যা থেকে পৌরসভা মাসিক ভাড়া গ্রহণ করতে পারবে যা পৌরসভার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করবে। নতুন করে নানামুখী উন্নয়নের মাধ্যমে কমলগঞ্জ পৌরসভাকে বদলে দেওয়ার কারিগর হিসেবে ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মাখন চন্দ্র সূত্রধর।
জানা যায়, কমলগঞ্জ পৌরসভার ভানুগাছ বাজারে পূর্ব ও পশ্চিম পাশের নালার ওপর প্রকল্প কর্তৃক জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, মৌলভীবাজার থেকে ইজিপিতে দরপত্রের মাধ্যমে ড্রেন স্ল্যাবসহ নির্মাণ করা হয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। তৎকালীন পৌর মেয়র মো. জুয়েল আহমেদের সিদ্ধান্ত ছিল কালভার্টে স্ল্যাব নির্মিত হলে পূর্ব ও পশ্চিম অংশ ভবিষ্যতে পৌর কর্তৃপক্ষ সালামির বিনিময়ে সেখানে সেমিপাকা দোকান গৃহনির্মাণ করে পৌরসভার মাসিক ভাড়া গ্রহণ করতে পারবে যা পৌরসভার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করবে। সে লক্ষ্যে কালভার্টের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে স্ল্যাবসহ কালভার্ট নির্মিত হওয়ার পর জায়গাটি অরক্ষিত থাকায় ভানুগাছ বাজারের ব্যবসায়ীসহ খুচরা ফল বিক্রেতারা সে জায়গার ওপর ময়লা-আবর্জনা ফেলে জায়গাটি দখল করে নষ্ট করে ফেলতেছে। তাই পৌর কর্তৃপক্ষ বর্তমানে সিদ্ধান্ত নেয় যে, জায়গাটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেলামির ভিত্তিতে সেমিপাকা দোকান গৃহনির্মাণ করে দিলে জায়গাটি সুরক্ষিতসহ পৌরসভার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।
অতিসম্প্রতি একটি কুচক্রীমহল ইর্ষান্বিত হয়ে কমলগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে ভানুগাছ বাজারের দোকানকোঠা নির্মাণ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভুল এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী কাজী মামুনুর রশীদ, আবু তালেব, আরমান হোসেন দুলনসহ অনেক ব্যবসায়ীরা জানান, পৌরসভার এমন উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। আরও আগে যদি এমন উদ্যোগ নেওয়া হতো তাহলে কমলগঞ্জের ভানুগাছ বাজারের চিত্র পাল্টে যেত। বর্তমানে বাজারের ভেতরে দোকান ঘর নির্মাণ ও পৌরসভার ভেতরে ড্রেনের ওপর দোকানকোটা নির্মাণ করায় পৌর এলাকার ভানুগাছ বাজারের চিত্র পাল্টে গেছে। সবগুলো চালু হলে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মানুষজন এসে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। যা থেকে সরকার ভালো রাজস্ব আদায় করতে পারবে।
নিজ অর্থায়নে পৌরবাজারে ঘর নির্মাণ করা রাজন, পারভেজ, শুভ, বুলবুল, মুক্তাদিরসহ অনেকেই জানান, আমরা পৌরসভায় আবেদন করি। তার পরিপ্রেক্ষিতে নিজ অর্থায়নে দোকানকোটা নির্মাণ করি। যা থেকে পৌরসভা মাসিক ভাড়া আমাদের কাছ থেকে গ্রহণ করবেন। এতে করে সরকারের বাড়তি রাজস্ব আয় হবে। তারা জানান, বর্তমানে কিছু কুচক্রী মহল পৌরসভার এমন উন্নয়নের চিত্র দেখে ওঠে পড়ে লেগেছে নিন্দা করার জন্য। তারা ফায়দা লুটতে না পারায় বিভিন্ন ফেক আইডি ব্যবহার করে পৌরসভার বদনাম ছড়াচ্ছে। যা তারা কখনো সফল হতে পারবে না।
ভানুগাছ বাজার পৌর বণিক সমিতির সভাপতি ও কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া সফি বলেন, স্থানীয় উদ্যোক্তা ও বণিক সমিতির সহায়তায় বাজারে দোকানকোটা নির্মাণ করা হয়। যা পৌর বণিক সমিতির যেমন লাভ হবে, তেমন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পৌরসভার আয় বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও জানান, বর্তমান পৌর প্রশাসক যেকোনো ধরনের নাগরিক সমস্যার কথা জানালে তিনি ছুটে যান সেই সমস্যা সমাধানে। এভাবে তিনি অল্প সময়ে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। এত অল্প সময়ে প্রশাসক হিসেবে যে সকল কাজ হাতে নিয়েছেন সেগুলো ছিল পৌরবাসীর প্রাণের দাবি।
আলাপকালে কমলগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ বেলাল আহম্মদ জানান, পৌরসভার ভানুগাছবাজারে ঘর নির্মাণ ও ড্রেনের ওপর দোকান কোটা নির্মাণের পর বাজারের পুরো চিত্র পাল্টে গেছে। যা আগের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এসব ঘর ও দোকানঘর থেকে পৌরসভা রাজস্ব আয় করতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত, অক্টোবর ৬, ২০০৯ সালের পৌরসভার সম্পত্তি চুক্তি ৪৪-১ (ক) বিধি মোতাবেক ‘পৌরসভার মালিকানাধীন অথবা তার ওপর ন্যস্ত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ, উন্নয়নের জন্য বিধান করিতে পারিবে’ এবং ৪৪-২ (খ) বিধি মোতাবেক ‘নিজস্ব অথবা সরকার অথবা অন্য কর্তৃপক্ষ হতে প্রাপ্ত সম্পত্তির সার্বিক ব্যবস্থাপনা এবং উন্নতি সাধন করতে পারবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কমলগঞ্জ পৌর প্রশাসক মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, তিনি নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই এ কাজগুলো করে যাচ্ছেন। যতদিন দায়িত্বে রয়েছেন ততদিন কমলগঞ্জ পৌর ও উপজেলার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাবেন। এ বিষয়ে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।