বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘এই সংস্কার সারা জাতি চায়, আমরাও চাই। যে দলই ক্ষমতায় আসুক বা জাতীয় সংসদে যারাই মেজরিটি পাক, তাদের এটা বাস্তবায়ন করতেই হবে।’তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করব, যে সমস্ত বিষয়ে ভিন্ন মত আছে, নোট অব ডিসেন্ট আছে, ওগুলো একদম পরিষ্কারভাবে দফাওয়ারি উল্লেখ থাকবে- কী কী বিষয়ে, কীভাবে নোট অব ডিসেন্ট আছে। কারণ নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার এখতিয়ারের জন্যই তো আমরা ঐকমত্য কমিশনে আলাপ-আলোচনা করেছি।’ গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আগামী ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় যে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে, তার আগে প্রধান উপদেষ্টা আশ্বস্ত হতে চেয়েছিলেন বিভিন্ন বিষয়ে। তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে সবাই অংশগ্রহণ করে এবং এটাকে একটা ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে আমরা সংরক্ষণ করি, স্বাক্ষর করি।’তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই সম্মত হয়েছি। বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার সুযোগ হয়নি। কয়েকজন বক্তব্য রেখেছেন, সব দল অংশগ্রহণ করেনি। আমি আমার বক্তব্যে বলেছি, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যেই আমরা যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন হোক, অন্যান্য কর্মকাণ্ড হোক, সব কিছুর লক্ষ্য হবে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা- সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং একটা ক্রেডিবল ইলেকশন।’
‘এখন সেটা করার লক্ষ্যে আমরা জুলাই জাতীয় সনদ যেটা প্রণয়ন করছি তার সঙ্গে সম্পর্ক কী? আমি মনে করি, জুলাই জাতীয় সনদের সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নেই,’ যোগ করেন তিনি।সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘এই সংস্কার সারা জাতি চায়, আমরাও চাই। যে দলই ক্ষমতায় আসুক বা জাতীয় সংসদে যারাই মেজরিটি পাক, তাদের এটা বাস্তবায়ন করতেই হবে। গণভোটের কথা আমরা বলেছি, সেই গণভোটে যাতে জনগণের পক্ষ থেকে একটা সার্বভৌম এখতিয়ার, কর্তৃত্ব প্রদান করা হয়। যাতে সেটা ম্যান্ডাটরি হয় জাতীয় সংসদের ওপর, সমস্ত সংসদ সদস্যদের ওপরে। যাতে এই সংস্কারগুলো, যেগুলো জনগণ পক্ষে রায় দেবে সেটা যেন গ্রহণ করি।’
‘কথা থাকল জুলাই জাতীয় সনদে কি কোনো প্রশ্ন থাকবে গণভোটের ব্যাপারে? একটাই প্রশ্ন থাকতে হবে, আমরা সবাই জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করব, যে সমস্ত বিষয়ে ভিন্ন মত আছে, নোট অব ডিসেন্ট আছে, ওগুলো একদম পরিষ্কারভাবে দফাওয়ারি উল্লেখ থাকবে- কী কী বিষয়ে, কীভাবে নোট অব ডিসেন্ট আছে। কারণ নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার এখতিয়ারের জন্যই তো আমরা ঐকমত্য কমিশনে আলাপ-আলোচনা করেছি।’ যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আলোচনার উদ্দেশ্যই ছিল যে সমস্ত বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত, সেগুলো সংকলিত করা। যে সমস্ত বিষয়ে দ্বিমত অথবা ভিন্ন মত সেগুলো সংকলিত করা। আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হবে উইথ নোট অব ডিসেন্ট। যে সমস্ত বিষয়ে ভিন্ন মত আছে, সেগুলো স্পষ্ট উল্লেখ করে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সেভাবেই জুলাই জাতীয় সনদ প্রণীত হলে, স্বাক্ষরিত হলে গণভোটে একটাই প্রশ্ন থাকতে পারে যে, জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে, জনগণ তার পক্ষে আছে কি নাই; হ্যাঁ অথবা না বলুন।’
‘আমরা আশা করি, এই গণভোটে না ভোটের পরিমাণ হাতে গোনা যাবে। কারণ সমগ্র জাতি তো সংস্কারের পক্ষে। সুতরাং আমরা ধরেই নিতে পারি জনগণ সংস্কারের পক্ষে আছে। আমরা সবাই আছি। সকল রাজনৈতিক দল আছে। এভাবে গণভোটে যে ফলাফল আসবে, তার একটা কারণ হলো- সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণ যাতে গণভোটের মধ্য দিয়ে এমন একটা এখতিয়ার-কর্তৃত্ব দেয় সংসদকে, যাতে করের সেটা বাধ্যবাধকতা থাকে প্রতিপালনে-বাস্তবায়নে,’ বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সেটাকে বলা হচ্ছে গাঠনিক ক্ষমতা। সেই সংসদকে দেওয়া হচ্ছে এবং সেটার অনুবলে যখন কোনো সংস্কার বা সংশোধনী গৃহীত হবে, সেটা চাইলেও জুডিশিয়ারি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারবে না। এটাই হচ্ছে গণভোটের ভিত্তি। আমরা অপেক্ষায় আছি আগামীকাল শুক্রবার (১৭ তারিখ) আমাদের ঐতিহাসিক দলিল জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হবে সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এবং সেটার পরে সেই স্বাক্ষরিত দলিল সবার কাছে দেওয়া হবে। জাতির জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তার পরে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের কাছে ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন প্রক্রিয়াসহ সুপারিশ করবে।’
‘সেই সুপারিশ হিসেবে আমরা বলেছি যে, গণভোটের মধ্য দিয়ে একইদিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সেই সম্মতিটা নেওয়া যায়। যার মধ্য দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের সমস্ত প্রস্তাবগুলো যেগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হয়েছে, নোট অব ডিসেন্টসহ সেটা বাস্তবায়ন হবে,’ যোগ করেন তিনি।