বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার না করতে সবার প্রতি আহ্বান অন্তর্বর্তী সরকারের

  • ইউএনবি   
  • ১৭ জুলাই, ২০২৫ ১৫:০৯

সবাইকে বিভ্রান্তিকর বা প্রকৃত তথ্যভিত্তিক নয় এমন কোনো বক্তব্য, যেগুলো বিভ্রান্তি ছড়ায় ও জনগণের মধ্যে সম্প্রীতি বিনষ্ট করে— তা প্রচার না করার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের সম্পত্তি ময়মনসিংহে ভেঙে ফেলা হচ্ছে— এমন কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) এমন আহ্বান জানানো হয়েছে। এই সম্পত্তিটি মূলত তার দাদা, বিশিষ্ট সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর মালিকানাধীন ছিল— এমন দাবি করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

সব রেকর্ড নতুনভাবে যথাযথভাবে খতিয়ে দেখার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়— তথ্যনির্ভর অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে, আলোচ্য বাড়ির সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের কোনো সম্পর্ক কখনোই ছিল না। এই ভবনটি স্থানীয় জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী নির্মাণ করেছিলেন তার নিজস্ব বাসভবন ‘শশী লজ’-এর পাশেই, তার কর্মচারীদের জন্য।

পরে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর এটি সরকারের অধীনে চলে আসে। এরপর সরকার এটি বাংলাদেশ শিশু একাডেমির জন্য বরাদ্দ দেয়। এরপর থেকেই এই বাড়িটি জেলা শিশু একাডেমির অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়।

জমিটিও ছিল অ-কৃষি সরকারিভাবে মালিকানাধীন (খাস) এবং দীর্ঘমেয়াদি ইজারার ভিত্তিতে শিশু একাডেমিকে দেওয়া হয়েছিল। জেলা প্রশাসন জমি-সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে নিশ্চিত করেছে যে অতীতের রেকর্ড অনুযায়ী, জমিটি সরকারের মালিকানাধীন এবং রায় পরিবারের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, স্থানীয় প্রবীণ নাগরিক ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সম্মানিত ব্যক্তিরাও বলেছেন, শিশু একাডেমির ইজারাভুক্ত এই জমি ও ভবনের সঙ্গে রায় পরিবারের কোনো ঐতিহাসিক সংযোগ নেই। সরকার আরও জানায়, এই বাড়িটি কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবেও তালিকাভুক্ত নয়।

তবে বাড়ির সামনের সড়কটি ‘হরকিশোর রায় রোড’ সত্যজিৎ রায়ের প্রপিতামহ হরকিশোর রায়ের নামে নামকরণ করা হয়েছে। হরকিশোর রায় ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর দত্তক পিতা। রায় পরিবার একসময় হরকিশোর রায় রোডে একটি বাড়ির মালিক ছিলেন, যা তারা অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সেই বাড়িটি আর অস্তিত্বে নেই।

বর্তমানে যে ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে, সেটি জরাজীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অযোগ্য। ২০১৪ সাল থেকেই শিশু একাডেমি শহরের অন্য একটি ভাড়াকৃত ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং পরিত্যক্ত ভবনটি স্থানীয় অসামাজিক ব্যক্তিদের অপরাধকর্মের আখড়া হয়ে উঠেছিল।

‘তাই ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে ওই জায়গায় আধা-পাকা একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তীতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি জেলা প্রশাসনকে পুরোনো ও জরাজীর্ণ ভবনটি নিলামের মাধ্যমে অপসারণের অনুমতি দেয়,’ বলছে অন্তর্বর্তী সরকার।

নিলাম কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৭ মার্চ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় জনসাধারণকে এ বিষয়ে ‘ব্যাপকভাবে অবহিত’ করা হয়। গত (বুধবার) বিকেলে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক এক আলোচনা সভার আয়োজন করেন। সেখানে প্রবীণ নাগরিক, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকসহ স্থানীয় সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।

সরকার জানায়, বৈঠকে প্রখ্যাত লেখক কঙ্গাল শাহীন ব্যাখ্যা করে বলেন, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির নিয়ন্ত্রণাধীন এবং বর্তমানে যেটি ভাঙা হচ্ছে— সেই জরাজীর্ণ ভবনের সঙ্গে হরকিশোর রায় বা সত্যজিৎ রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই।

ময়মনসিংহের নাগরিক সমাজের একজন সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক বিমলকান্তি দে বাড়িটির মালিকানা নিয়ে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। স্থানীয় কবি ও লেখক ফরিদ আহমেদ দুলালও নিশ্চিত করেন যে, বাড়িটির সঙ্গে সত্যজিৎ রায় বা তার পরিবারের কোনো সংযোগ নেই।

সকলেই একমত হন যে ময়মনসিংহের শিশুদের কল্যাণে শিশু একাডেমির নতুন ভবন নির্মাণ জরুরি, এবং কাজটি বিলম্ব না করে এগিয়ে নেওয়া উচিত। সরকার জানায়, উপস্থিত সকলে একবাক্যে স্বীকার করেন যে, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিত্যক্ত এই ভবনের সঙ্গে সত্যজিৎ রায় বা তার পরিবারের কোনো ঐতিহাসিক বা পারিবারিক সম্পর্ক নেই।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ময়মনসিংহের প্রত্নতত্ত্ব গবেষক স্বপন ধরও বলেছেন, আলোচ্য বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি নয়।

অন্যদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে— বাংলাদেশে ময়মনসিংহে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ির সংস্কার ও পুনর্গঠনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে ভারত প্রস্তুত।

বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, বাংলাদেশে ময়মনসিংহে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি— যা তার দাদা ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সম্পত্তি ছিল— সেটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে।’

বর্তমানে এই সম্পত্তি বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন এবং এটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, বলে ভারত সরকার উল্লেখ করে।

ভারত সরকার আরও জানায়, এই ভবনটি বাংলা সাংস্কৃতিক নবজাগরণের একটি প্রতীকস্বরূপ নিদর্শন হওয়ায় এর ভাঙার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা এবং এটি মেরামত ও পুনর্গঠন করে একটি সাহিত্য জাদুঘর এবং ভারত-বাংলাদেশের যৌথ সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলা শ্রেয় হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই উদ্দেশ্যে ভারত সরকার সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।’

এ বিভাগের আরো খবর