‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ এই প্রতিপাদ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হলো জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে এক বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও ড্রোন শো। সোমবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যায় এই আয়োজনে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, স্মৃতিচারণা ও সংগীতানুষ্ঠান ছাড়াও ছিল ব্যতিক্রমী ড্রোন প্রদর্শনী।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। সহায়তায় ছিল মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, সমাজকল্যাণ ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন সোনিয়া মুরশিদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস শেন।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব মো. মফিদুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ এবং জনপ্রিয় শিল্পী সায়ান সম্মিলিতভাবে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর সায়ান এককভাবে পরিবেশন করেন গণসংগীত ও জনপ্রিয় সংগীত।
‘জুলাই নারী দিবস’ উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রযোজিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এসব প্রামাণ্যচিত্রে জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা তুলে ধরা হয়। এরপর দেখানো হয় ‘দীপক কুমার গোস্বামী বলছেন’ এবং ‘জুলাই বিষাদসিন্ধু’ চলচ্চিত্র দুটি।
এ সময় শহীদ মিনারে বেশ কয়েকটি ডিসপ্লেতে জুলাই অভ্যুত্থানের এসব প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য, টিএসসি ও শামসুন্নাহার হলের সামনেও শিক্ষার্থীদের উপভোগের জন্য বেশ কয়েকটি ডিসপ্লে লাগানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশ, আনসার, প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যসহ বেশ কিছু নিরাপত্তা টিম কাজ করে।
আয়োজনে আরও সংগীত পরিবেশন করে ব্যান্ড ‘ইলা লা লা লা’। তবে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে ড্রোন শো, যা শহীদ মিনারের আকাশে এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয় উপস্থিত দর্শকদের।
ড্রোন শোর প্রথম অংশে তুলে ধরা হয় কীভাবে বাংলাদেশ ধাপে ধাপে জুলাই পর্যন্ত এসে পৌঁছায়। দ্বিতীয় অংশে ফুটিয়ে তোলা হয় ১৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক বিস্ফোরণ।
উল্লেখ্য, ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ছাত্রাবাস থেকে বেরিয়ে আসার মুহূর্ত আন্দোলনে নতুন গতি আনে। সেই দৃশ্য পুনর্নির্মিত হয় ড্রোনের মাধ্যমে, যা আন্দোলনের ইতিহাসকে নতুনভাবে তুলে ধরে।
এই আয়োজন ছিল জুলাই মাসব্যাপী চলমান স্মরণ ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের একটি অংশ। আয়োজকেরা জানান, তরুণ প্রজন্মের মাঝে জুলাইয়ের আত্মত্যাগ ও চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই অনুষ্ঠান। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে নারী নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ এ আয়োজন অনন্য ভূমিকা রাখবে বলে আয়োজকেরা মনে করেন।