বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শহীদ সাগরের স্মৃতি মনে করে কবরে ছুটে যান মা, এখনো বাকরুদ্ধ বাবা

  • খান রুবেল, বরিশাল   
  • ১৪ জুলাই, ২০২৫ ২২:২০

গত বছরের জুলাইয়ে ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেছিলেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার সাগর হাওলাদার। তার মৃত্যুর প্রায় এক বছর হতে চলল। এখনো সন্তানের স্মৃতি মন থেকে মুছতে পারেননি সন্তান হারা মা আম্বিয়া বেগম। এখনো রাতে দুচোখের পাতা বুঝতেই সাগরের নানান স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায় তাকে। রাত যতই গভীর হোক ঘুম ভেঙে ছুটে যান ছেলের কবরের পাশে। কখনো আবার ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে কাঁদেন নিরবে।

একমাত্র ছেলে সোহাগকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে আছেন বাবা নুরুল হক হাওলাদারও। ছেলের কথা ভেবে ভেবে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। কিছুতেই তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পারছে না তার পরিবার। বাড়িতে কেউ গেলে তাকে জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নুরুল হক।

স্বজনরা জানিয়েছেন, একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে মা-বাবা দুজনেই ভেঙে পড়েছেন। তাদের মুখে হাসি নেই এক বছর ধরে। ছেলে বিহীন দুটি ঈদও কেটেছে তাদের আনন্দহীন। মা আম্বিয়া বেগম সারাদিন সাংসারিক কাজের মধ্যেও ছেলের স্মৃতি স্মরণ করে অনবরত কাঁদতে থাকেন।

সম্প্রতি সাগরের বাবা নুরুল হক ও মা আম্বিয়া বেগমকে ঢাকায় ছেলের গুলিবিদ্ধের ঘটনাস্থল ধানমন্ডি আবাহনী ক্লাবের কর্ণারে পুলিশ বক্সের কাছে নিয়ে যান স্বজনরা। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন যে স্থানে সাগর গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সেখানে পিচঢালা পথে সাগরের রক্তের দাগ দুই সপ্তাহের মত ছিল। একথা শুনে সাগরের বাবা-মা আবেগ আপ্লুত হয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করেন।

সাগরের চাচা মইনুল হোসেন জানান, ২০২৪ সালের মে মাসে সাগর ঢাকায় গিয়েছিল, ওর স্বপ্ন ছিল বিদেশ গিয়ে বেশি টাকা আয় করে বাড়িতে পাকা ভবন তৈরি করবে। সেই ভবনে সবার জন্য আলাদা কক্ষ থাকবে ও বোনের লেখাপড়াসহ মায়ের জন্য কাজের লোক রেখে দেবে। কিন্তু সাগরের স্বপ্ন দূঃস্বপ্নে রূপ নিলো।

তিনি বলেন, সরকারতো আর আমাদের সাগরকে এনে দিতে পারবে না। তারা যে সাহায্য সহযোগিতা করবে তাতে কি আমাদের সাগর ফিরে আসবে। আমরা চাই বিচার। যারা আমার ভাতিজাকে গুলি করে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই।

সাগরের একমাত্র ছোট বোন মরিয়ম খানম এখন ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। ধীরে ধীরে ভাইয়ের শূণ্যতা বুঝতে শুরু করেছে মরিয়ম। তাই ভাইয়ের কথা ভেবে বাড়ির এককোনে একা-একা চুপচাপ বসে থাকে, কারোর সঙ্গেই কথা বলছে না। কেউ ডাকলেও সাড়া দেয়না।

বাড়িতে শহীদ সাগরের বৃদ্ধ দাদা আব্দুল মজিদ হাওলাদার (৭৫)। বাড়ির উঠানে বসে বাকরুদ্ধ হয়ে নিরবে মূর্ছাযান। কান্নার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। একমাত্র নাতিকে হারিয়ে এখন নিস্তেজ হয়ে আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে তিনি।

উল্লেখ্য, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগধা গ্রামের নুরুল হক হাওলাদারের ছেলে সাগর হাওলাদার (১৭)। বাবা বাগধা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন নৈশ প্রহরী। এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সাগর ছিল বড়। বাবার রোজগারে তাদের সংসার চলতো না।

তাই ২০২৪ এর জুলাইয়ে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরুর দুই মাস পূর্বে সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে জীবন-জীবিকার খোঁজে প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিল কিশোর সাগর। সেসময় ধানমন্ডি লেকের পাড়ে একটি চায়ের দোকানে কাজ করতো সে।

২০২৪ এর ১৯ জুলাই আবাহনী মাঠের কর্ণারে পুলিশ বক্সের কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ চলাকালে দুপায়ে গুলিবিদ্ধ হয় সাগর। ওইদিনই তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ জুলাই মৃত্যুবরণ করে সাগর। গুলিবিদ্ধ হওয়ায় ওই সময় পতিত আওয়ামী লীগের দোসরদের নিষ্ঠুরতার কারণে সাগর যথাযথ চিকিৎসাও পায়নি বলে অভিযোগ তার পরিবারের।

এ বিভাগের আরো খবর