লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হচ্ছে। বাড়ছে চুরি-ডাকাতি। প্রতিনিয়ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চুরি -ডাকাতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। গরু-চাগল থেকে শুরু করে মানুষের বসত বাড়ি ও দোকানপাটের মালামাল চুরি হচ্ছে। বসতবাড়ির পানির কল, মটর, শাড়ি কাপড় কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না চোরের হাত থেকে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
প্রতিদিন কোথাও না কোথাও চলছে সন্ত্রাসীদের মহড়া। উপজেলার দুর্গম চর এলাকা বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়নের অলিগলিতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধ চক্র। এরা সংঘবদ্ধ হয়ে গভীর রাতে মানুষের গরু চুরি থেকে শুরু করে বসত বাড়িতে হানা দিচ্ছে। অন্যদিকে এ দুটি ইউনিয়নে নারী শিক্ষার্থীদের উত্যক্ত করা ও ধর্ষণ চেষ্টার সংখ্যাও বেড়ে গেছে ব্যাপক হারে। সব মিলিয়ে রামগতি উপজেলার ৮ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বাসিন্দারা রয়েছে চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। এসব চুরি ডাকাতি ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ বা মামলা থানায় নিলেও পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক। তারা অপরাধী চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এতে আইনশৃংখলা পরিস্থতির অবনতি হচ্ছে। পুলিশের নীরবতায় মানুষ থানার উপর আস্থা রাখতে পারছেনা। উপজেলার সব চেয়ে বেশী চুরি ডাকাতি হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে দুর্গম চরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত চরগাজী ও বড়খেরী ইউনিয়নে।
সূত্রমতে, গত ১০ মাসে চরগাজী ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের টুমচর গ্রামের মাইনউদ্দিন মিয়ার বাড়ি থেকে ৬টি গরু চুরি হয়, তিন নম্বর ওয়ার্ডের সামা গ্রামের জসিমের বাড়ি থেকে ৩ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৬০ হাজার টাকা, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের নুর উদ্দিনের বাড়ি থেকে একটি অটোরিকশা ও নগদ ১২ হাজার টাকা,চার নম্বর ওয়ার্ডের হকসাহেব প্রকাশ ডুবাইওয়ালার বাড়ি থেকে নগদ ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও দুই ভরি স্বর্ণ ডাকাতি হয়, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের মীর বাড়ির হাসান বেপারীর ঘর থেকে নগদ দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা ও আড়াই ভরি স্বর্ণ ডাকাতি হয়, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের মীর বাড়ির নুর আলমের ঘর থেকে নগদ ৪ লাখ টাকা ও দেড় ভরি স্বর্ণ ডাকাতি হয়, তিন নম্বর ওয়ার্ডের জসিম বেপারীর বাড়ি থেকে নগদ তিন লাখ টাকা চুরি হয়, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের হেলাল মেস্তরীর বাড়ি থেকে নগদ ২৬ হাজার টাকা ও একশেট কানপাশা,চার নম্বর ওয়ার্ডের মাইন উদ্দিনের বাড়ীতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তিন নম্বর ওয়ার্ডের হাসান ড্রাইভারের দোকান থেকে নগদ এক লাখ ৬০ হাজার টাকা, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সাইফুদ্দিনের দোকান থেকে নগদ ২৮ হাজার টাকা ও মালামাল, দুই নম্বর ওয়ার্ডের বেচুর দোকান থেকে নগদ ৬ হাজার টাকা ও মালামাল, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের আহমদিয়া মার্কেটের নুর উদ্দিনের দোকান থেকে নগদ ১৭ হাজার টাকা ও মালামাল ও আট নম্বর ওয়ার্ডের নোমান সিদ্দিকীর বাড়ি থেকে দুইটি গরু চুরি হয়।
এছাড়া বড়খেরী ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের আলিম উদ্দিনের বাড়ী থেকে এক ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৩২ হাজার টাকা,বড়খেরী ইউনিয়ন রামগতি বাজারের হাজী জসিম উদ্দিন ট্রেডার্স থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা ডাকাতি হয়, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের রামগতি বাজারের মাইনউদ্দিনের দোকান থেকে নগদ এক লাখ ২০ হাজার টাকা, চার নম্বর ওয়ার্ডের তেলি বাড়ীর এরশাদের ঘর থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা ও পাঁচ ভরি স্বর্ণ চুরি। চরগাজী ও বড়খেরী ইউনিয়ন ছাড়াও উপজেলার চররমিজ, চরপোড়াগাছা,চরবাদাম, আলেকজান্ডার, চরআলগী ইউনিয়ন ও রামগতি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে চুরির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়নে কয়েকটি ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক হওয়ায় মানুষ থানা পুলিশের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
চরগাজী ইউনিয়নের টুমচর গ্রামের মাইন উদ্দীন বলেন, ‘যেভাবে চুরি ডাকাতি বেড়ে গেছে, তাতে আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। আমার ছয়টি গরু চুরি হলেও এখন পর্যন্ত কোন সন্ধান পাইনি।’
বড়খেরী ইউনিয়নের মোঃ এরশাদ বলেন, মানুষের নিরাপত্তা বলতে কিছুই নেই, চরগাজী ও বড়খেরী ইউনিয়নে গণহারে চুরি ডাকাতি হচ্ছে। থানা পুলিশকে জানিয়েও কোন লাভ হচ্ছেনা।
ব্যাপকহারে চুরি ডাকাতি বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘কি করতাম? কোনভাবেই থামানো যাচ্ছেনা। পুলিশের টহল জোরদার করতে বলে আসছি। এতো বড় ইউনিয়নে একদিকে পাহারা দিলে অন্যদিকে ঢুকে পড়ে চোরের দল।’
বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আমরা গ্রাম পুলিশ দিয়ে নিয়মিত পাহারা দিচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা সভায় বার বার বলছি। এরপরেও কোনভাবেই চুরি ডাকাতি বন্ধ করা যাচ্ছেনা। মানুষকেও একটু সতর্কভাবে চলা উচিত।
চুরি-ডাকাতির অভিযোগ মানতে নারাজ রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ কবির হোসেন। তিনি বলেন, টুকটাক কিছু চুরি-ডাকাতির খবর আমরাও পাচ্ছি। থানায় আসা অভিযোগগুলো গ্রহণ করছি। অপরাধী ধরতে পুলিশ কাজও করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভাল বলে দাবি তার।