বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নকশা জটিলতায় চার বছর ধরে সেতুর কাজ বন্ধ!

  • নাসরিন সিপু, বরগুনা:   
  • ২০ মে, ২০২৫ ১৪:৪৮

নকশা জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে চার বছর ধরে সেতুর কাজ বন্ধ। ভোগান্তিতে পড়েছে সোনাকাটা ইকোপার্কের পর্যটক, জেলে, বন বিভাগের লোকজন ও স্থানীয়রা। সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় খেয়ায় নদী পার হতে হয়। এতে পর্যটক সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় ট্যাংরাগিরি ইকোপার্কের কথা বলছিলাম। এটি বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার ফকির হাটে অবস্থিত। ইকো পার্কে যেতে সোনাকাটা খাল পার হতে হয়। গত ২০ বছর ধরে ওই খালে স্থানীয়রা সাঁকো নির্মাণ করে আসছেন। ওই সাঁকো দিয়ে পর্যটকরা ইকো পার্কে প্রবেশ করতেন।

২০২০-২১ অর্থ বছরে আরবিআরপি প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সোনাকাটা খালে ৭২ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে দরপত্র আহবান করে। ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭১৫ টাকা ব্যয়ে কাজ পায় বরিশালের এমএস বিল্ডার্স এন্ড মেসার্স আমির ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন লিমিটেড। ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করার কথা থাকলেও তারা যথাসময়ে কাজ শুরু করেননি। ওই বছরের শেষের দিকে কাজ শুরু করেন। আর ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেতুর দুই পাড়ের গার্ডার নির্মাণ করেই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তালতলী উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা গেছে, নকশা জটিলতার কারণে স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দেয়।

কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা প্রকৌশলী অফিস নকশা জটিলতার একটা ঠুনকো অজুহাত তুলে কাজ বন্ধ রাখে। বার বার উপজেলা প্রকৌশল অফিস ও ঠিকাদারকে সেতুর কাজ সমাপ্তের কথা বললেও তারা করছেন না। গত চার বছর ধরে সেতু নির্মাণ না করায় ভোগান্তিতে পড়েছে পর্যটক, বন বিভাগের লোকজন ও স্থানীয়রা।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুকনো মৌসুমে প্রতিদিন অন্তত চার-পাঁচ শতাধিক পর্যটক ইকো পার্কে আসত। কিন্তু সেতুর এ অবস্থার কারণে পর্যটক আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে সরকার গত চার বছর অন্তত কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। এ ছাড়া সেতুর এমন অবস্থার কারণে ইকো পার্কের সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে।

সোমবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সেতুর দুই পাড়ে ৪৮ মিটার গার্ডার নির্মাণ করা হয়েছে। মাঝ খানের ২৪ মিটার কাজ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া দুই পাড়ের অ্যাপ্রোচ সড়কের নির্মাণ কাজ হয়নি।

পর্যটক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সোনাকাটা ইকো পার্কে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভোগান্তির শেষ নেই। সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় খেয়ায় খাল পার হতে হয়েছে। তাতে তো আরো ভোগান্তি। খেয়া থাকলে মাঝি থাকে না। মাঝি থাকলে খেয়া থাকেনা।’

স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী মো. মহসিন বলেন, সোনাকাটা খালটি ভাড়ানি খাল না। এটা দিয়ে বড় কোনো নৌযান চলাচল করে না, করে ছোট নৌযান। এতে সেতুর মধ্যখানে উচ্চতায় কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। কিন্তু ঠিকাদার ও স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর নকশা জটিলতার অজুহাত তুলে চার বছর ধরে কাজ বন্ধ রেখেছেন। এতে পর্যটক আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. টুকু সিকদার বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ মিলে গত চার বছর ধরে সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছেন। কেন বন্ধ করে রেখেছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় এলাকার পর্যটক, জেলে ও বন বিভাগের লোকজনের বেশ সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত এ সেতুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তের দাবী জানান তিনি।

ফরেস্টার জাকির হোসেন বলেন, সেতুর কারণে পর্যটক আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। পর্যটকরা আসলেই সেতুর এমন অবস্থা দেখেই ইকো পার্কে প্রবেশ না করে ফিরে যাচ্ছে। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

সোনাকাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরাজী মো. ইউনুচ বলেন, ওই খালে বড় কোন নৌযান চলাচল করে না। যে কারণে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছে তা কোন কারণই না। তিনি আরও বলেন, সেতু নির্মাণের নকশা অনুসারে কাজ করতে উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে লিখিত দিয়েছি কিন্তু ঠিকাদার ও প্রকৌশলী অফিস কাজ শুরু করছেন না। দ্রুত সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর দাবী জানান তিনি।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

তালতলী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, স্থানীয়দের বাধার কারণে নকশা জটিলতায় সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। তিনি আরোও বলেন, ঠিকাদার যে পরিমাণ কাজ করেছে তাকে সেই পরিমাণ বিল ছাড় দেওয়া হয়নি। তাকে অল্প বিল ছাড় দেওয়া হয়েছে।

বরগুনা জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান সেতুর কাজ বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি সেতু নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করেছি। ওই স্থানের জন্য সেতুর বর্তমান নকশাই যথেষ্ট। আমি সেতুর বর্তমান অবস্থা জানিয়ে প্রধান প্রকৌশল অফিসকে অবহিত করেছি। সেতুটির কাজ শুরু করতে স্থানীয় চেয়ারম্যান লিখিতভাবে অবহিত করেছেন। অধিদপ্তরের অনুমতি পেলেই কাজ শুরু করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর