বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। পর্যটনে সমৃদ্ধ হলেও শিক্ষার আলো এখনো পুরোপুরি পৌঁছায়নি দ্বীপটিতে। এই দ্বীপেরই বাসিন্দা সালমা আক্তার। ছোট থেকেই বেশ মেধাবী এই তরুণী। তবে হঠাৎ কালো ছায়া নেমে এসেছে তার জীবনে। বন্ধ হতে বসেছে তার পড়াশোনা।
সালমা বর্তমানে কক্সবাজার সরকারি কলেজে স্নাতকে (অনার্স) অধ্যয়নরত। জেএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া এই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারলেও থেমে যাননি। কক্সবাজার শহরে থেকে হোস্টেলে থাকতেন, চালিয়ে যাচ্ছিলেন লেখাপড়া। তবে হোস্টেলের তিন মাসের বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করতে না পেরে বাধ্য হন সেখান থেকে সরে আসতে। ফিরে যান সেন্টমার্টিনে। এরপর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে তার পড়াশোনা।
সালমা বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম পড়ালেখা করে কিছু একটা করব, পরিবারকে তুলে ধরব। কিন্তু এখন সব অনিশ্চিত হয়ে গেছে।’ সালমার স্বপ্ন পড়াশোনা শিখে বড় হয়ে সুদিন ফেরাবেন পরিবারে। দুঃখ ঘুছাবেন বাবা-মা’র। আর কাজ করবেন সমুদ্রের লোনা জলে পোড়া মানুষের জীবনমান উন্নয়নে।
দ্বীপের অধিকাংশ বাসিন্দার জীবিকা পর্যটন ও মৎস্য আহরণ কেন্দ্রিক। বর্তমানে সরকারি নির্দেশনার কারণে পর্যটকদের সেন্টমার্টিনে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে মাছের প্রজনন মৌসুমে (১৫ এপ্রিল থেকে) মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় আয়-রোজগার একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের।
সালমার বাবা জামিল হোসেন বলেন, ‘মাছ ধরা বন্ধ, পর্যটকের কাজও নেই। আগে যা-ও কিছু করতাম, এখন তাও বন্ধ। মেয়ের পড়াশোনা আর চালাতে পারছি না।’
টানা আয় বন্ধ থাকায় চরম সংকটে পড়েছেন দ্বীপবাসীরা। এর প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর। অনেকেই পড়াশোনা বন্ধ করে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘সালমার বিষয়টি আমাদের জানা আছে। আমরা তাকে সহায়তা করার বিষয়ে ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।’
কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সুলেমান বলেন, ‘সালমার মতো মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে আমরা চেষ্টা করছি। তার পড়াশোনা যেন বন্ধ না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেন্টমার্টিনের শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্লাসে ফিরতে চান সালমাসহ পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। কার্যকর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দ্বীপের বাসিন্দাদের রক্ষা ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টির দাবি সংশ্লিষ্টদের। যেন আর্থিক কারণে কেউ শিক্ষার আলো থেকে ছিটকে না পড়ে।