যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে চতুর্থ দিনের মতো দূরপাল্লার সব পরিবহন বাস বন্ধ রয়েছে। সোমবার সাতক্ষীরা থেকেও দূরপাল্লার বাস বন্ধ রেখেছে মালিক সমিতি। এতে ভারত ফেরত হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ রয়েছে গত শুক্রবার থেকে। তবে ভারত ফেরত অনেক পাসপোর্ট যাত্রী ১২ কিলোমিটার দূরে নাভারন সাতক্ষীরা মোড় থেকে সাতক্ষীরা রুটের গাড়ি ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। সোমবার থেকে সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে মালিক সমিতি।
যাত্রীদের চেকপোস্টে না নিতে দিয়ে গভীর রাতে পৌর বাস টার্মিনালে নামাতে বাধ্য করার অভিযোগে শুক্রবার রাত থেকে বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার সব বাস বন্ধ রেখেছে মালিক সমিতি।
দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভারত থেকে বেনাপোল স্থল বন্দরে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। ছবি: নিউজবাংলা
বেনাপোল পরিবহন ম্যানেজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘দাবি-দাওয়া না মানায় পরিবহন মালিকরা তাদের গাড়ি এই রুটে চালাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ সোমবার থেকে সাতক্ষীরা রুটও বন্ধ করে দিয়েছে মালিক সমিতি।’
সাতক্ষীরা কে লাইন পরিবহনের জামতলা কাউন্টার প্রধান আনোয়ার হোসেন বিদ্যুৎ বলেন, ‘বেনাপোলের সমস্যার সমাধান না হওয়ায় সাতক্ষীরা থেকে দূরপাল্লার পরিবহনের সব বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মালিক সমিতি। সমিতির পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো টিকিট বিক্রি করছি না।’
এদিকে হঠাৎ করে বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ থাকায় আটকা পড়েছেন ভারত থেকে আসা হাজার হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী। গন্তব্যে যেতে তারা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও ট্রেনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে ভোগান্তি, সময় অপচয়ের পাশাপাশি খরচও বেশি হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।
বেনাপোল চেকপোস্টে কথা হয় ভারত ফেরত যাত্রী নেত্রকোনার জিতেন সাহা, নারায়ণগঞ্জের সাদ্দাম হোসেন টিপু, ঢাকার ফজলুর রহমান শেখ, লাল্টু হোসেন ও বিনয় পালের সঙ্গে।
জিতেন সাহা বলেন, ‘তিনজন মিলে একটি প্রাইভেট কার ভাড়ায় নিয়ে যশোরে যাচ্ছি। সেখান থেকে বাস ধরে বাড়ি যাবো। ভারত থেকে দেশে ফিরে এখন দেখছি দুর্ভোগের শেষ নেই।’
যশোর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন পাপ্পু বলেন, ‘বেনাপোল চেকপোস্টে বন্দর ভেহিক্যাল টার্মিনাল চালু হওয়ায় কমে গেছে গাড়ির জট। বাস চলাচলে কোনো যানজট হয় না। ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের পণ্যবাহী ট্রাকের যানজট সৃষ্টি হতো। দূরপাল্লার যাত্রীদের নিরাপত্তা ও দুর্ভোগের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।’
বেনাপোলে যানজট নিরসনে পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারের নির্দেশনা দেয় জেলা প্রশাসন। পরিবহন কর্তৃপক্ষ পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারে সহমত পোষণ করে দিনের বাসগুলো ছাড়ছিল সেখান থেকেই। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুবিধার জন্য রাতের বাস চেকপোস্ট টার্মিনালে এসে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে বাস যাচ্ছিল পৌর টার্মিনালে।
হঠাৎ করে ২২ নভেম্বর গভীর রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসের যাত্রী পৌর বাস টার্মিনালে নামিয়ে নেয়া হয়। চেকপোস্ট টার্মিনালে বাস প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। এর প্রতিবাদে বাস চলাচল বন্ধ রাখে মালিক সমিতি।
টানা চার দিন ধরে বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াতকারী যাত্রীরা পড়েছেন সীমাহীন ভোগান্তিতে। এর সুরাহা চান ভুক্তভোগী যাত্রীরা।