দিনাজপুর জেলায় এবার আধুনিক প্রদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা আউশ ধানের বাম্পার ফলন অর্জিত করতে সক্ষম হয়েছে। এতে খুশি কৃষক। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বিগত সময়ে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া আউশ ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি করতে হয়েছে। কৃষি বিভাগের গবেষণায় উদ্ভাবন করা উপশী জাতের ব্রি-৯৮ আউশ ধান চাষে জেলায় বাম্পার ফলন অর্জিত হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলার ১৩টি উপজেলায় ৫ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। মৌসুমের শুরুতেই গত মে মাসে জেলার ১৩টি উপজেলাতে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কৃষকের মাঝে বিনা মূল্যে আউশ ধানের নতুন উদ্ভাবন করা ব্রি-৯৮ জাতের বীজ ও রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বিতারণ করা হয়েছিল।আউশ ধান চাষ সফলভাবে অর্জিত করতে, কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা কৃষকদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দিয়ে আউশ ধান চাষে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।জেলা সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্ণাই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রেজাউল করিম জানান, কর্ণাই গ্রামে সমবায় ভিত্তিতে কৃষকরা এবার আউশ ধানের ব্রি ধান-৯৮ জাত চাষ করেছেন। আউশ ধান চাষের সাড়ে ৩ মাসের মধ্যে অর্জিত ফসল ঘরে তুলতে পেয়ে কৃষকরা খুব খুশি। এক একর জমিতে ৭৫ থেকে ৮০ মণ ধানের ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের বিনা মূল্যে দেওয়া বীজ, সার ও কীটনাশক ধান চাষে ব্যবহার করে অনাবাদি জমি অধিক উৎপাদনশীল হয়ে উঠেছে। বর্তমান বাজারে কাঁচা ধান সাড়ে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। ধানের খড় বিক্রি করে বাড়তি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ধান বিক্রির পাশাপাশি খড় বিক্রিতেই কৃষকরা তাদের খরচের একটা অংশ ওঠাতে পারছেন।জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার মহনপুর গ্রামের আদর্শ কৃষক মো. শরিফুল ইসলাম (৪২) জানান, চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে জমিতে বীজতলা তৈরি করে ব্রি-৯৮ জাতের আউশ ধান চারা রোপণ করা হয়। কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত পরামর্শে সেচ, সার ও কীটনাশক ব্যবহারে বেশ ভালো ফলন হয়েছে। ভাদ্র-আশ্বিনের এই সময় মাঠজুড়ে অর্জিত আউশ ধানের সোনালি শোভা কৃষকদের মন ভরে তোলেছে। কৃষকরা তাদের অর্জিত ধান কাটতে শুরু করেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই ধানকাটা শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ধান কাটার পর আবার ওই জমিতে আগাম জাতের আলু চাষের প্রস্তুতি শুরু করবেন কৃষকরা। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় কৃষকরা আউশ ধান ঘরে তোলে, আবার ওই একই জমিতে আলু চাষ করার পরিকল্পনা করেছে।সদর উপজেলার, কর্ণাই গ্রামের কৃষকরা বলছেন, নতুন জাতের আউশ ধান চাষে সাফলতা তাদের এনে দিয়েছে। ওই গ্রামের কৃষক মো. আব্দুর রাজ্জাক (৪৭) জানান, এ বছর তিনি ৭৫ শতক জমিতে আউশ ধান চাষ করেছে। তার অর্জিত জমি থেকে ৬৫ মণ আউশ ধান পেয়েছে। ওই ধান বিক্রি করে আগাম জাতের আলুর চাষ করবেন।ওই গ্রামের আদিবাসী কৃষক লুকাস মার্ডী বলেন, গত বছর থেকে সমবায় ভিত্তিতে আউশ ধান চাষ শুরু করেছি। এবার উন্নত জাতের ব্রি ধান-৯৮ আউশ ধানের আবাদ করেছি এবং বেশ ভালো ফলন পেয়েছি। সমবায়ের মাধ্যমে আউশ ধান চাষ করায় পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম এবং ভালো ফলন অর্জিত হয়েছে। আগামী বছর এই জাতের আউশ ধান বেশি করে আবাদ করার আশা রয়েছে তার।অপর কৃষক মৃণাল কান্তি জানান, তিনি দেড় একর জমিতে আউশ ধানের চাষ করেছে। এখন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়ে গেছে। এই সময়টা কৃষকদের কিছুটা অভাব থাকে। এখন ধান ঘরে তোলা কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। ধান বিক্রি করে আলু চাষের খরচ পুষিয়ে যাবে।সদর কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, এই অঞ্চলের জমি একটু উচুঁ এবং লালমাটি হওয়ায় শুধু রবি শস্যে চাষে ব্যবহার করা হতো। আমন বা ইরি-বোরো ধান এখানে চাষ করা হতো না। সরকারি উদ্যোগে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে আউশ চাষ শুরু করা হয়েছে। এখন সেই জমিতেই ৩টি করে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে বিনা মূল্যে বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ দিয়ে কৃষকদের ফসল উৎপাদনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায়, কৃষকরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, চলতি মৌসুমে সদর উপজেলা ৬৭০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষে বাম্পার ফলন উৎপাদন হয়েছে। প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া আউশ ধান চাষে কৃষকরা স্বল্প সময়ে ফলন পেয়েছেন। নতুন উদ্যোগ গ্রহণে আউশ ধান চাষে কৃষকরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। আগামীতে আরও অধিক কৃষক আউশ ধান চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন, সে বিষয় কৃষি বিভাগ কাজ করছেন বলে তিনি ব্যক্ত করেন।
দিনাজপুরে আউশের বাম্পার ফলনে খুশি কৃষকরা
এ বিভাগের আরো খবর/p>