কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সমর্থন জানানো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ স্লোগান দেয়াকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিজেদের ‘রাজাকার’ বলতে আন্দোলনকারীদের লজ্জা হয় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সোমবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর এবং শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
চীনে সাম্প্রতিক সফর নিয়ে রোববার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও পাবে না। তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? সেটা আমার প্রশ্ন। দেশবাসীর কাছেও প্রশ্ন যে, রাজাকারের নাতি-পুতিরা সবকিছু পাবে। মুক্তিযোদ্ধারা পাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোটা আর মেধা তো এক জিনিস নয়। মুক্তিযুদ্ধের সন্তান, নাতিপুতি মেধাবী না আর যত রাজাকারের বাচ্চা, নাতিপুতি উনারা মেধাবী, তাই না?’
ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে রোববার রাতে বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কোটা সংস্কার আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা।
ওই সময় তারা ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, প্রত্যাহার করতে হবে’ ধরনের স্লোগান দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার বাহিনী যেভাবে এ দেশে অত্যাচার করেছে…তাদের সেই অত্যাচার, রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি। তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছেন, লাখো মা-বোন নির্যাতিতা। তাদের এই অবদান ভুললে চলবে না। এটা মনে রাখতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে, এখানে শান্তি কমিটিতে, কেউ রাজাকার কমিটিতে ছিল, কিন্তু অনেকে মানুষের ক্ষতি করেনি, কিন্তু যে বাহিনীগুলো তারা তৈরি করেছিল, তাদের হাতে অস্ত্র দিয়েছিল এবং তাদের দিয়ে মানুষের ক্ষতি করত, অত্যাচার করত, লুটপাট করত, গণহত্যা চালাত।
‘তাদের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি, তাদের বিচার করে অনেকের ফাঁসিও দিয়েছি। তাদের বিচারে যারা নির্যাতিত, তারা ন্যায়বিচার পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য এখন যখন শুনি মেয়েরাও স্লোগান দেয়। কোন দেশে আমরা আছি? এরা কী চেতনায় বিশ্বাস করে? কী শিক্ষা তারা নিল? কী তারা শিখল?’
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের। জাতির পিতার একটি ডাকে এই দেশের মানুষ, ঘরবাড়ি, পরিবার সবকিছু ছেড়ে দিয়ে যুদ্ধে গেছে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করে বিজয় এনে দিয়েছে।
‘আর এই যারা বাহিনীতে (রাজাকার-আল বদর-আল শামস) ছিল, তারা এ দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। সেটা ভুলে গেলে চলবে না।’