এবারের ঈদে আনন্দ নেই ঝালকাঠি সদরের আগলপাশা গ্রামের দম্পতি জামাল-মিনারার পরিবারে। একটি গাছ তাদের ঈদ আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। ঝালকাঠি পৌর এলাকার ডিসি পার্ক সংলগ্ন সুগন্ধার তীরে একটি টিনশেড ঘরে চায়ের দোকান ছিল মিনারার একমাত্র আয়ের সম্বল। ঘূর্ণিঝড় রিমালে গাছ পড়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায় মিনারার দোকানঘরটি।
ওই দোকানটা দিয়ে অসুস্থ স্বামী জামাল মিয়াসহ চার সন্তানের জন্য আহার যোগাতেন মিনারা বেগম। বাসন্ডা ইউনিয়নের আগলপাশা গ্রামে সরকারের দেয়া মুজিব বর্ষের উপহারের ঘরে থাকেন পরিবারটি, কিন্তু ঝড়ের পর থেকে ঠিকমতো দুই বেলা খাবার জুটছে না তাদের। এ বছর তাদের ঈদ আনন্দ ভাঙা দোকানঘরের নিচেই চাপা পড়ে আছে।
বুকে কষ্ট নিয়ে এসব কথা এ প্রতিবেদককে বললেন মিনারা বেগম।
মিনারা বলেন, ‘দোকানঘরটিতে চা নাস্তা বিক্রি করতাম, সেখানেও লোনের কিস্তি দিতাম। তারপর ঘরে বাজার করতাম। বর্তমানে ঘরে নেই ভাতের চাল, আবার কিস্তির চাপ। দোকানঘরটি নতুন করে তুলব সেই পয়সাও নেই। ঈদ আসবে ঈদ যাবে, ওসব ভেবে কী করব। এবারের ঈদ আনন্দ ভাঙা ঘরের নিচেই চাপা পড়ে আছে।’
মিনারার স্বামী অসুস্থ জামাল হাওলাদার বলেন, ‘সরকার বাহাদুরের দিকে চাইয়া রইছি। মোগো থাহার জন্য সরকার যেহেতু একখান ঘর দেছে, রোজগারের ব্যবস্থাও করবে। দোকানঘরটা যদি আবার করতে পারতাম তয় আবার বাজার কইররা কয়টা ডাইল ভাত খাইতে পারতাম।’
জামাল মিনারা দম্পত্তির মেয়ে ফাতিহা আক্তার স্কুলে পড়াশোনা করেছে। মা বাবার সঙ্গেই সংসারের কাজ করে সে।
ফাতিহা বলে, ‘আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা ধার করে গত মাসে কিস্তি দিছি। এ মাসে হয়তো ঘরের কিছু বিক্রি করে দিতে হবে। এই ঈদে আমাদের কেউ এক কেজি চাউলও দেয় নাই। আমার ছোট দুইটা ভাই বেকার বসে আছে। ঈদে আমরা কোথাও যাব না, আমরা ঘরেই থাকব। টাকা রোজগার হলে ঈদের আনন্দ আগামী বছর করব।’
এ বিষয়ে কথা হয় ঝালকাঠি পৌর সভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির সাগরের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘রেমালের পর বরাদ্দ আসেনি। কোরবানি ঈদে অসহায় পরিবারপ্রতি ১০ কেজি করে চাল দেয়ার স্লিপ আমি পেয়েছি। ব্যস্ততার কারণে মিনারাকে দেয়া হয়নি। তার স্লিপ আমি আমার কাছে রেখে দিয়েছি।’
বাসন্ডা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাবের হোসেন বলেন, ‘জামল-মিনারার পরিবারের ভোট পৌরসভা এলাকায়, তাই হয়তো রাতুল মেম্বার তাদের স্লিপ দেয়নি। তবে আমার কাছে আসলে আমি দিয়ে দেব।’