জ্বালানি খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর সম্ভাবনা দেখছে ইতালি। পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোর দরপত্র তারা নিবিড়ভাবে অনুসরণ করছে।
ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো দূতাবাসে ইউএনবিসহ তিনটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য একটি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন। বিশ্বের অনেক কোম্পানি এই দরপত্রের দিকে তাকিয়ে আছে।
“তেল ও গ্যাস খাতে কর্মরত প্রধান বহুজাতিক ইতালিয়ান কোম্পানি ‘এনি’ এই দরপত্র পর্যবেক্ষণ করছে। ইতালিয়ান কোম্পানি এবং অন্যান্য কোম্পানির জন্য দরপত্র প্রস্তাব বিবেচনা করার জন্য এখনও সময় আছে। সুতরাং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন।”
বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ উপকূলে অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে অফশোর দরপত্র আহ্বান করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ করপোরেশন পেট্রোবাংলা।
‘অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস এক্সপ্লোরেশন আন্ডার বাংলাদেশ অফশোর বিডিং রাউন্ড ২০২৪’ শীর্ষক দরপত্রটি চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ মাস সময় দিয়ে আহ্বান করা হয়েছে।
উন্মুক্ত দরপত্রের আলোকে মোট ২৪টি অফশোর ব্লকের মধ্যে নয়টি অগভীর ব্লক এবং ১৫টি গভীর সমুদ্র ব্লক বিডিং রাউন্ডের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের জ্বালানি খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য জ্বালানির উৎস খুঁজে বের করা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
‘গত বছরের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রোম সফরের সময় বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে জ্বালানি খাতসহ দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।’
বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসকে (এলএনজি) একটি ক্ষেত্র উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এখন আমাদের এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে এবং জ্বালানি খাতে আরও সহযোগিতা করতে হবে। এর মধ্যে এলএনজি অন্যতম। নবায়নযোগ্য ও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র; যেখানে ইতালীয় সংস্থাগুলো বেশ উন্নত এবং বাংলাদেশে অনেক সুযোগ রয়েছে।’
রাষ্ট্রদূত আলেসান্দ্রো বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে সম্পর্ক গভীর হচ্ছে এবং যা বর্তমানে বহুমুখী। দুই দেশের উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন আর স্বল্পোন্নত দেশ নয় এবং উন্নয়নশীল হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক দিক থেকে শক্তিশালী দেশ এবং ইতালীয় ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে।’
তিনি বলেন, একই সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী নানা ক্ষেত্রে তার গুরুত্ব বাড়াচ্ছে ইতালি।
‘ইতালিতে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের লোকজন রয়েছে। এই কারণে দুই দেশের সম্পর্ক সম্প্রসারণ হচ্ছে। এটি দুই দেশের মধ্যে মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করে। এই সংখ্যা এবং সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে।’
বহুমুখী সম্পর্কের ব্যাখ্যায় আলেসান্দ্রো বলেন, ‘৩০ বছর আগের সম্পর্কের দিকে তাকালে হয়তো এটা ছিল শুধু উন্নয়ন, মানবিক সহায়তা ও কিছু মৌলিক বাণিজ্য।
‘এখন আমাদের সম্পর্ক অনেক বৈচিত্র্যময়। এতে আছে বাণিজ্য, অভিবাসন, প্রতিরক্ষা ও সংস্কৃতি। সুতরাং আমরা একসঙ্গে কী করতে পারি তার পরিসর অনেক বিস্তৃত এবং আমি আমাদের সম্পর্কের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এমন অনেক সম্ভাবনা রয়েছে যেগুলো আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। দুই দেশের একে অপরকে দেয়ার মতো অনেক কিছু রয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এটি পুরোপুরি প্রকাশ করা হয়নি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বেশ উন্নত এবং অত্যন্ত কার্যকর। এটি প্রমাণিত যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ প্রথম বৃহত্তম সৈন্য প্রেরণকারী দেশ।
‘এটি ধরে রাখতে হলে অন্যান্য দেশের সহযোগিতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করা দেশগুলোর অন্যতম হওয়ায় ইতালি গর্বিত এবং আমরা বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রাখি।’
এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপের জন্য ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল (পররাষ্ট্র সচিবের সমতুল্য) জুনের শেষ দিকে বাংলাদেশে আসবেন।’
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। দিনটি স্মরণে প্রতি বছর ১ জুলাই ইতালিয়ান সিটিজেন অ্যাব্রোডের পরিচালক বাংলাদেশ সফর করবেন।
‘প্রতি বছর ওই হামলায় নিহতদের স্মরণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাই পরিচালক আসছেন। এগুলো সংক্ষিপ্ত সফর। এরপর আমরা অবশ্যই বাড়তি সফরের কথা বিবেচনা করব।’
ইতালির রোমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, সরাসরি আকাশ পথের যোগাযোগকে আমরা স্বাগত জানাই।
‘নতুন এই ফ্লাইটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। ইতালি-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি খুবই ভালো অগ্রগতি।’