তীব্র তাপপ্রবাহ শেষে ভ্যাপসা গরমের মধ্যে মধু মাস জ্যৈষ্ঠে এসে সুমিষ্ট রসালো দেশি ফলে ভরে গেছে মেহেরপুরের ফলের বাজার।
লিছু, আম, কাঁঠাল, তালের শাঁসের মাঝেই এসে হাজির পাকা জাম। সপ্তাহখানেক ধরে জেলার ফলের বাজারগুলোতে দেখা মিলছে আধাপাকা জাম।
বাজারে দুই জাতের জামের দেখা মেলে। একটি খুদি জাত, যা খুব ছোট এবং অন্যটি মহিষে জাত বা বিদেশি জাত হিসেবে পরিচিত। এটি আকারে বেশ বড় ও মিষ্টি।
মৌসুমের শুরুতেই পাকা জাম উঠেছে জেলার তিনটি উপজেলার হাট-বাজারে, তবে অন্যবারের তুলনায় এবার দাম অনেকটাই বেশি। যা কি না অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি জাম বিক্রি হচ্ছে প্রকার ভেদে ২৭০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায়।
ক্রেতারা বলছেন, যে জাম এক সময় কি না এমনিতেই পাওয়া যেত, তা বতর্মানে মৌসুমি যেকোনো ফলের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, আগের তুলনায় জাম গাছের সংখ্যা কমে গেছে। তা ছাড়া অনাবৃষ্টির কারণে গাছে জাম ধরেছেও কম। পাকতেও সময় লাগছে বেশি। যার ফলে চাহিদার বিপরীতে আমদানি কম থাকায় বেড়েছে দাম।
জাম ক্রেতা আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘গত দুইদিন আগে আমি গাংনী বাজারে জাম বিক্রি করতে দেখে গাড়ি থেকে নেমে জামের দাম জিজ্ঞেস করলাম। বিক্রেতা বলল, আড়াইশ গ্রামের দাম ৮০ টাকা। এক কেজি নিলে ৩১০ টাকা নেবে। তারপরও মৌসুমের নতুন ফল হিসেবে আধা কেজি কিনেছি ১৫০ টাকা নিয়েছে।’
ফল ক্রেতা সেলিম রেজা বলেন, ‘জাম বাজারে দুই সপ্তাহের মতো পাওয়া যায়, তারপর শেষ হয়ে যায়। আমার বাচ্চাদের জাম খুব পছন্দের ফল। তাই চলতি মৌসুমে বেশ খোঁজাখুঁজির পরে গাংনী বাজারে পেয়েছি, তবে তার দাম আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।’
আরেক ফল ক্রেতা মিলন হোসেন বলেন, ‘আমি লিচু কিনতে এসে দেখি পাশেই জাম বিক্রি হচ্ছে। আধা কেজি ওজন করার পরে দাম দিতে গিয়ে দেখি ১৬০ টাকা চায়। তার মানে ৩২০ টাকা করে কেজি পড়ছে। অথচ এই জাম এক সময় আমার বাড়ির গাছ থেকে পাড়ার জন্য লোক পাইনি। গাছের নিচে পাকা জাম পড়ে সব সময় ময়লা থাকত।’
ফল বিক্রেতা শাহিন আলম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় জামের কোনো বাণিজ্যিক আবাদ নেই। আমাদের গ্রামের লোকজনের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে জাম গাছ খোঁজ করে তারপরে জাম সংগ্রহ করতে হয়। এ বছর জাম গাছে জাম ধরেছে কম। আবার বৃষ্টি কম হওয়াই জাম বাড়েনি সাথে পাকছে কম।
‘মূলত জাম গাছ থেকে সংগ্রহ করা কঠিন হওয়াই দামটা বেশি পড়ে। একটা দিন পুরো খাটলে একটা লেবার খরচ পড়ে ৫০০ টাকা।’
মেহেরপুর কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সামসুল আলম বলেন, ‘মেহেরপুরের আবহাওয়া কৃষির জন্য খুব উপযোগী। এখানে সব ধরনের ফলই হয়ে থাকে, আম, লিচু, কাঁঠাল, জামসহ বিভিন্ন ধরনের, তবে আম, লিচু, কাঁঠালের বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলেও জামের ক্ষেত্রে এখনো হয়নি।
‘তারপরও জেলায় যে পরিমাণে জাম আগে আছে। তা স্থানীয় চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে অন্য বছরের তুলনায় সব ধরনের ফল কম হয়েছে।’