ভারতীয় ক্রাইম হিন্দি সিনেমা আব-তাক ছপ্পান দেশে অনুপ্রাণিত হয়েই অস্ত্র কিনেছেন ছাত্রের পায়ে গুলি করা সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক রায়হান শরীফ।
বলিউডের খ্যাতিমান অভিনেতা নানা পাটেকর ওই সিনেমায় ইন্সপেক্টর সাধু আগাশের চরিত্রে অভিনয় করে আলোচিত হয়েছিলেন। এ সিনেমার গল্পটি মুম্বাই এনকাউন্টার স্কোয়াডের ইন্সপেক্টর সাধু আগাশেকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে, যিনি পুলিশ এনকাউন্টারে ৫৬ জনকে হত্যা করেছিলেন। এ চরিত্রই রায়হানকে অস্ত্র কেনার প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
পুলিশ বলছে, সিনেমাটি দেখার পর থেকেই রায়হানের গুলির কেনার নেশা হয়। শখের বশে অস্ত্র- গুলি ও চাকু কিনে সংগ্রহ করতেন। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আরও কিছু অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা ছিল এ শিক্ষকের। তবে গ্রেপ্তার হওয়ায় সেই ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে না আর।
শুক্রবার রিমান্ড শেষে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুলহাজ উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকালে রায়হান শরীফকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। পরে তাকে বিকেলে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে ডিবির পরিদর্শক জুলহাজ উদ্দীন বলেন, একজন শিক্ষক হয়েও রায়হান শরীফ কেন অস্ত্র-গুলি নিজের সংগ্রহে রাখতে গেলেন, তার প্রকৃত কারণ বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে রায়হান শরীফ জানিয়েছেন, ভারতের হিন্দি আব-তাক ছপ্পান সিনেমা দেখেই মূলত নিজের কাছে এমন অস্ত্র রাখার পরিকল্পনা করতে শুরু করেন তিনি।
ওসি জুলহাজ উদ্দীন আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই রায়হান অস্ত্রের ব্যাপারে খোঁজ নেন। তবে উপযুক্ত সোর্স না পাওয়ায় তার পরিকল্পনা সফল করতে একটু সময় লেগে যায়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাজশাহী শহরে তার পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এলাকায় এক অস্ত্র কারবারির সঙ্গে পরিচয় হয়। রায়হান নিজেই কুষ্টিয়ায় গিয়ে প্রথমে একটি অস্ত্র কেনেন।
তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরে আবার কুষ্টিয়া গিয়ে ওই একই ব্যক্তির কাছ থেকে আরেকটি অস্ত্র কেনেন। সেখান থেকেই তিনি গুলিও কেনেন। তিনি অনলাইনে ছবি দেখে বিদেশি চাকু সংগ্রহ শুরু করেন। শখের বশে অস্ত্র, গুলি ও চাকু কিনে সংগ্রহ করতেন রায়হান শরীফ। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আরও কিছু অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা ছিল তার। অস্ত্র ব্যবহার করে অবৈধ কোনো কাজ করার ছক রায়হানের ছিল কি না, এমন কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত রায়হানের কাছে অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে একজনের নাম পাওয়া গেছে। এই চক্রে আরও কেউ রয়েছেন কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্লু পেয়েছি। যেখান থেকে রায়হান শরীফ অস্ত্র কিনেছিলেন, সেই ব্যক্তি পেশাদার অস্ত্র কারবারি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে পুলিশ।
কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক রায়হান শরীফকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়েছে। রিমান্ড শেষে শুক্রবার বিকেলে তাকে আদালতে তোলা হয়।
গত ৪ মার্চ বিকেলে শ্রেণিকক্ষের ভেতরে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন তিনি। ফরেনসিক বিভাগের শিক্ষার্থীদেরসিডিউলবহির্ভূত পাঠদান নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে ছাত্রকে গুলি করা হয়। এর পর ওই চিকিৎসককে অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এর পর পুলিশ তাকে আটক করে।
আটকের পর তার কাছ থেকে সেভেন পয়েন্ট ফাইভ সিক্স বোরের দুটি অবৈধ বিদেশি পিস্তল, ৮১টি গুলি, চারটি ম্যাগাজিন ও ১২টি বিদেশি চাকু জব্দ করে পুলিশ। এই ঘটনায় রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। এরই মধ্যে তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, তমালকে গুলি করার আগে শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষুব্ধ হন শরীফ। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, তোমাদের কারও কি পোষা পাখি আছে? আমার পোষা পাখি আছে। এই বলে তিনি ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে আমাদের বলেন, এটা আমার পোষা পাখি। এরপর গুলি করেন।
গুলি শিক্ষার্থী তমালের ডান উরুতে লাগে। পরে সহপাঠীরা ৯৯৯-এ কল দিলে সদর থানা পুলিশ ও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ঘটনাস্থলে পৌঁছে রায়হান শরীফকে অস্ত্রসহ আটক করে।
ঘটনার পরের দিন ৫ মার্চ স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৭ মার্চ শিক্ষক রায়হান শরীফকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বাস্থ্য বিভাগ।