কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম মরিচ্যা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেমের বাড়িটিকে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা।
শনিবার সকাল ৮টার দিকে বাড়ির সামনে বসা ছিলেন বয়োবৃদ্ধ এ বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাড়ির উঠানে সারিবদ্ধ বসানো চেয়ার। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িটিতে ভিড় জমতে শুরু করেছে আত্মীয়-স্বজন আর স্থানীয়দের।
বাড়ির একটু দূরে পশ্চিম মরিচ্যা জামে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তৈরি করা হচ্ছে ৩টি কবর। যেখানে শাণিত করা হবে বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে, স্ত্রী ও সন্তানকে। যারা রাজধানীর বেইলি রোডের ‘গ্রিনফ কোজি কটেজ’ ভবনে লাগা আগুনে মারা গেছেন।
প্রাণ হারানো তিনজন হলেন কাস্টমস ইন্সপেক্টর শাহজালাল উদ্দিন, তার স্ত্রী মেহেরুন নেসা হেলালী এবং তাদের চার বছর বয়সী মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিলা।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গ থেকে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মরদেহ তিনটি গ্রহণ করেন শাহজালাল উদ্দিনের বড় ভাই শাহজাহান সাজু।
উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সাজু জানান, মরদেহবাহী গাড়ি নিয়ে তিনি ঢাকা থেকে মরিচ্যার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন।
সন্তান হারিয়ে অনেকটা নির্বাক মুক্তিযোদ্ধা ও চিকিৎসক পিতা। তারপরও পাথরচাপা কষ্টে কথা বলেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে।
বাবা আবুল হাশেম বলেন, পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে শাহজালাল উদ্দিন তৃতীয়। তিনি ২০১৭ সালে কাস্টমসের চাকরিতে যোগ দেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার পানগাঁও কাস্টমস অফিসে কর্মরত ছিলেন তিনি। প্রতিদিন বাবার সঙ্গে তিন থেকে চারবার ফোনে কথা বলতেন। বৃদ্ধ বাবার চিকিৎসা ও ওষুধের জন্য তাড়া দিতেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার পর বাবার সঙ্গে সর্বশেষ কথা বলেছিলেন শাহজালাল উদ্দিন।
বাবা বলেন, ‘ছেলে আমাকে জানিয়েছিল, টানা তিন দিন ছুটি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে খাগড়াছড়ি ভ্রমণে যাচ্ছে। এরপর থেকে আর কোনো ফোন পাইনি। আমি ধারণা করেছিলাম, ছেলেটা বউ ও নাতনিকে নিয়ে খাগড়াছড়ি গেছে।’
এই কথাগুলোই বলেন প্রাণ হারানো শাহজালালের ছোট ভাই হাশেম বিন লিংকন।
হাশেম বলেন, ‘বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর কক্সবাজার কাস্টমস অফিসের ভাইয়ের এক সহকর্মী ফোন করে জানান ফেসবুকে অজ্ঞাত পরিচয়ে যে কয়েকজনের মরদেহ দেখা যাচ্ছে সেগুলোর মধ্যে তার ভাবী ও মেয়ের ছবি আছে। ভাইয়ের বিষয়টি জানেন না। তারপর থেকে পরিবারের পক্ষে যোগাযোগ করার পর শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভাবীর বাবা মোক্তার হোসেন হেলালী ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে গিয়ে তিনজনের মরদেহ শনাক্ত করেন।’
শাহজালালের একমাত্র বোন তসলিমা আকতার বলেন, ভাইদের মধ্যে অনেকটা বাবার ভূমিকা পালন করতেন শাহজালাল। প্রতিনিয়ত ফোন করে খোঁজ খবর নিতেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও ফোন করে কিছু লাগবে কিনা জানতে চেয়েছিলেন। এখন ভাই আর নেই।
মামাত ভাই স্কুল শিক্ষক জামাল উদ্দিন জানান, পশ্চিম মরিচ্যা জামে মসজিদ সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে কবর তৈরি কাজ চলছে।