রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় হওয়া দুই মামলার প্রতিটি আসামির সুবিচার দাবি করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।
পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ১৫তম বার্ষিকীতে রাজধানীর বনানীতে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন দাবি করেন।
পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহ চলাকালে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এ হত্যা মামলার রায় হয়। তাতে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
মামলায় ২৭৮ জনকে খালাস দেয়া হয়। এ বিষয়ে আপিল সর্বোচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায়।
আদালত সংশ্লিষ্টরা জানান, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় হওয়া দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ১৮৪ জনের আপিল এখন দেশের সর্বোচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায়। আর বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় চলছে সাক্ষ্যগ্রহণ।
বিডিআর বিদ্রোহের বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সেই কথাটি পুনরায় বলতে হয় যে, এই ঘটনা কীভাবে ঘটেছে, এই ঘটনার যবনিকার পেছনে কী ছিল, আজকে বাংলাদেশের মানুষ সেই সত্যি জানতে চায়। এটা তো গেল একটি দিক। অন্য দিকটি, যে মানবিক দিক, সেই দিকে আমি আপনাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে চাই।
‘যারা প্রাণ দিয়েছিলেন, সেই ৫৭ জন ছাড়াও আরও সর্বমোট প্রায় ৭৪ জন যারা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাদের পরিবারবর্গ যারা রয়েছেন, আপনারা তাদের কথাটি, তাদের যে বেদনা, সেই বেদনার কথা একবার চিন্তা করে দেখুন এবং সর্বশেষ তৃতীয় যে দিকটি রয়েছে, যে বিচারের কথা আমরা শুনেছি, সে বিচার হয়েছে, সে বিচার কি হয়নি, সে বিচারে কি আপিল হয়েছে, সে আপিলের শুনানি কি আজকে ১৫ বছর পার হয়েছে, তার পরবর্তীতে ২০১১ সালে কি আরেকটি বিস্ফোরক মামলা দেয়া হয়েছে, সেই মামলার বিচারকার্য আজকে প র্যন্ত কেন বিলম্বিত হচ্ছে?’
বিডিআর বিদ্রোহ মামলার বিচার নিয়ে বিএনপির বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক বলেন, “একটি কথা আছে আমাদের বাংলা ভাষায়: বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। ইংরেজি ভাষায় একটি কথা আছে, ‘যদি বিচার বিলম্ব হয়, তাহলে সেই বিচারের কোনো মূল্য থাকে না।’ কাজেই আজকে আমরা শুনেছি যে, সেই বিচার প্রক্রিয়া এখনও ঝুলে আছে।
“কেন ঝুলে আছে, কেন সেই অভিযোগে, যাদেরকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে, তারা আজকে পর্যন্ত বিনা বিচারে কেন তারা কারাবাস করছেন?”
তিনি বলেন, “অপরাধী শাস্তি পাবে, সে সম্বন্ধে আমাদের কিছু বলার নেই, কিন্তু আমরা যে আইনের ব্যবস্থায় বিশ্বাস করি, যার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের জুরিসপ্রুডেন্স (আইনের দর্শন) এবং জাস্টিস সিস্টেম (বিচার ব্যবস্থা) দাঁড়িয়েছে, সেখানে একটি কথা বলা আছে।
“সে কথাটি হচ্ছে এই যে, ‘কোনো দোষী ব্যক্তি যদি আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যায়, সেটা হতে পারে। একজন নিদোর্ষ ব্যক্তিও যেন কখনও শাস্তি না পায়।’ আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাস করি এবং সেই নীতিতে বিশ্বাস করে আমরা আজকে প্রতিটি বিডিআরের এই দুঃখজনক ট্র্যাজেডির প্রতিটি মানুষ, যারা এই সংক্রান্ত মামলায় যারা অভিযুক্ত রয়েছে, তাদের সুবিচার আজকে আমরা কামনা করি।”