খুলনার পাইকগাছায় চোখের পাতা ও ঠোট সুপার গ্লু দিয়ে আটকে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার মূল আসামিকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে পুলিশ।
শুক্রবার দুপুরে খুলনা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
এর আগে, গত সোমবার সকালে চোখ ও মুখে সুপার গ্লু লাগানো এক গৃহবধূকে অচেতন অবস্থায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা। সে সময় ঘরের মালামাল লুট ও ওই গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ তারা। প্রতিবেশিদের দাবি ছিল, রোববার রাতে তারা ওই গৃহবধূকে ঘরের মধ্যে হাত-পা বাঁধা বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করেন।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে পাইকগাছা থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে সবাইকে অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করা হয়। ওই রাতে বাড়ি থেকে স্বর্ণলঙ্ককার ও অর্থ খোয়া যাওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয় এজাহারে।
মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এরা হলেন- ইমামুল জোয়াদ্দার ওরফে এনামুল, আব্দুস সামাদ, সুমন হালদার ও রাশিদা বেগম।
পুলিশের দাবি, এনামুল ধর্ষণ ও লুটের সঙ্গে জড়িত এবং তার মা রাশিদা বেগম লুট করা স্বর্ণ বিক্রি করেছেন। সুমন হালদার লুট করা স্বর্ণের ক্রেতা।
এই তিনজনকে বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া গত বুধবার ভোরে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার হন আব্দুস সামাদ। পুলিশ ইতোমধ্যে তাকে আদালতে হস্তান্তর করেছে, বাকিদের আদালতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার বলেন, ‘গত রোববার সন্ধ্যায় ওই গৃহবধূর বাড়ির পাশের বাগানে এনামুল নেশা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে গৃহবধূকে একা বাড়িতে দেখে ঘরের সানসেট ধরে ছাদের উঠে সিঁড়ি দিয়ে ঘরে প্রবেশ করেন। পরে খাবারে চেতনানাশক মিশিয়ে দিয়ে চলে যান তিনি।
‘পরবর্তীতে রাত ২টার দিকে একইভাবে পুনরায় ঘরে প্রবেশ করে মূল্যবান জিনিসপত্র খোঁজাখুজি শুরু করেন। তখন গৃহবধূর ঘুম ভেঙ্গে গেলে তিনি পকেটে থাকা শক্তিশালী আঠা (সুপার গ্লু) বের করে গৃহবধূর চোখে এবং মুখে লাগিয়ে দেন। এক পর্যায়ে হাত-পা বেঁধে তাকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করেন। পরে গৃহবধূর গোঙানিতে পাশের বাড়ি থেকে সাড়া দেয়ায় তিনি কানের দুল ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যান।’
তিনি বলেন, “পরবর্তীতে লুট করা কানের দুলটি তার মা রাশিদা বেগমের মাধ্যমে চুকনগর স্বর্ণ পট্টিতে ‘মা জুয়েলার্স’ নামক দোকানে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন এনামুল। যে কারণে এনামুলের মা ও দোকান মালিক সুমন হালদারকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।”
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, এনামুল একজন দুর্ধর্ষ অপরাধী। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় এ পর্যন্ত ৯টি মামলা হয়েছে। সবশেষ বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তাকে পাইকগাছা পূর্ব কাশিমনগর থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও এক রাউন্ড তাজা গুলিসহ আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ধর্ষণের ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘চূড়ান্ত মেডিক্যাল রিপোর্টে বোঝা যাবে, ওই গৃহবধূ গণধর্ষণ হয়েছেন নাকি শুধু এনামুল ধর্ষণ করেছেন। ধর্ষণ ও লুটের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না, সে বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।’