অবৈধ বালু উত্তোলনে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে তিস্তা নদীর তীরে নির্মিত ৫ কোটি টাকার সলেডি স্পার বাঁধ। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নে গোবর্দ্ধন গ্রামের বাঁধের মাত্র একশত গজ ভাটিতে বসানো হয়েছে বালু উত্তোলনের বোমা মেশিন। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই বাঁধ বিনাশী কার্যক্রম।
জানা গেছে, তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে বিগত বিএনপি ও জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০২ সালে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্দ্ধন গ্রামে তিস্তা নদীর বাম তীরে সলেডি স্পার বাঁধ-২ নির্মাণ করে তৎকালীন সরকার। সেই বাঁধের একশত গজ ভাটিতে বোমা মেশিন বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করছে একটি বালু খেকো চক্র।
আর এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের এপিএস মিজানুর রহমানের ঘনিষ্ট সহযোগী শওকত হোসেন ওরফে বালু শওকত। গত ১১ বছর এপিএস মিজানের তিস্তা নদীর বালু উত্তোলন ও বিক্রির ব্যবসা দেখভাল করতেন তিনি।
মিজান পলাতক হলেও খোলস পাল্টিয়ে ব্যবসা ঠিক রেখেছেন শওকত আলী। তার বাড়ি পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বহর গ্রামে। বিগত দিনে এপিএস মিজান ও আওয়ামী ক্ষমতা দেখিয়ে বালু উত্তোলন করে শূন্য থেকে হয়েছেন কোটিপতি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে সরকারি কাজের অজুহাত দেখিয়ে তিস্তা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন বালু শওকত। বর্তমানে সরকারি কাজের অজুহাতে বালু তুলছেন শওকত। বোমা মেশিনটি সলেডি স্প্যার বাঁধের প্রায় একশত গজ ভাটিতে নেওয়া হয়েছে। ফলে সেখানে বড় গর্ত হওয়ায় যেকোনো মুহূর্তে ধসে যেতে পারে স্প্যার বাঁধটি। এটি ধসে গেলে শত শত বসতভিটা স্থাপনা ও আবাদি জমি তিস্তার কড়াল গ্রাসে বিধ্বস্ত হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সলেডি স্প্যার বাঁধের মাত্র একশত গজ ভাটিতে বোমা মেশিন বসিয়ে দক্ষিণে প্রায় পাঁচশত গজ দূরে মজুর বাড়ির পাশে স্তূপ করা হচ্ছে তিস্তা নদীর বালু। কয়েক দিন আগে স্তূপ করা হয় ওই এলাকার রফিজের ছেলে মন্টু মিয়া, মোসলেমের ছেলে মন্টু, নবিয়ারের ছেলে তাজাম্মেল, বজলুর ছেলে রবিউলের বাড়ির পাশেসহ অনেক স্থানে স্তূপ করছে। বালু তোলা শেষ হলে সুযোগ মতো সড়িয়ে নেওয়া হবে ট্রাকে। এমনটাই জানান স্থানীয়রা।
তবে সেখানে কর্মরত একজন শ্রমিক বলেন, শওকতের নির্দেশে বালু তোলা হচ্ছে। তার মেশিন তার তেল আমরা তার হয়ে কাজটা করছি মাত্র। বালু প্রসঙ্গে কিছু জানতে হলে শওকতের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন এ শ্রমিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে এপিএস মিজানের হয়ে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করেছে বালু শওকত। এখন মিজান নেই, ভোল্ট পাল্টিয়ে স্থানীয় অন্য দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আগের ব্যবসা ঠিক রেখেছেন শওকত।
একই স্থান থেকে প্রতি বছর বালু উত্তোলন করায় বাঁধটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। বন্যার সময় বাঁধটি কেঁপে উঠে। বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করলে স্থানীয় নেতাদের দিয়ে হয়রানি করে। তাই কেউ প্রতিবাদ করে না।
এসব বিষয়ে শওকত আলী ওরফে বালু শওকত বলেন, সলেডি স্প্যার বাঁধের ভাটিতে প্রায় ১৩ হাজার জিও ব্যাগে বালু ভরাট করার কাজ পেয়েছেন দিনাজপুরের একজন ঠিকাদার। তার হয়ে আমি নদী থেকে বালু উত্তোলন করে কাজ শেষ করেছি। এখন কে বালু উত্তোলন করছে তা আমার জানা নেই।
স্প্যার বাঁধের কাছে বালু মেশিন বসানোর কারণে বাঁধের ক্ষতি হবে কি না? এমন প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। মূল ঠিকাদারের নাম নম্বর চাইলেও দেননি তিনি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেন, জিও ব্যাগে বালু ভরাট ও ডাম্পিংয়ের কাজ চলমান। বালু স্থানীয়ভাবে ম্যানেজ করার কথা হয়েছে। তবে বাঁধের কাছে মেশিন বসানো ঠিক নয়। বিষয়টি দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।