‘প্রতিটি কলা গাছ ছোট থেকে আমার সন্তানের মতো করে বড় করেছি। যারা আমার কলা গাছ কেটেছে, তারা গাছ কাটেনি, আমার সন্তানের গলা কেটে দিয়েছে।’
কথাগুলো বলছিলেন মেহেরপুরের কলা চাষি শাহাজান আলী।
তিনি জানান, শনিবার কলা ব্যবসায়ীরা তার জমিতে গিয়ে বিঘাপ্রতি কলার দাম দিতে চেয়েছিলেন এক লাখ টাকা করে। আর শাহাজান আলী দাম চেয়েছিলেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা করে।
তবে পরদিন সকালে (রোববার) কলা চাষি শাহাজান আলী ও রহিদুল ইসলাম বাগানে গিয় দেখেন তাদের লিজ নেয়া ছয় বিঘা জমির কলা বাগান রাতের অন্ধকারে কারা যেন কেটে দিয়েছে।
জেলার গাংনী উপজেলার বালিয়াঘাট গ্রামে রোববার এ ঘটনা ঘটে।
কলা চাষি শাহাজান আলী বলেন, ‘আমাদের এই মাঠে কলার আবাদ খুব ভালো হয়। আবার বাজারে কলার দামও ভালো। তাই এক বছরের জন্য বিঘাপ্রতি ২০ হাজার টাকা হিসেবে জমি লিজ নিয়ে ঋণ বাকি করে দুজনে মিলে ছয় বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছি।’
তিনি জানান, সব মিলিয়ে জমিতে প্রায় ১৫ শ কাদি কলা ছিল। যার বতর্মান বাজার মূল্য আনুমানিক ১০ লাখ টাকা।
শাহাজান আলী বলেন, ‘গতকাল শনিবার এক কলা ব্যবসায়ী বিঘাপ্রতি আমাকে এক লাখ টাকা করে দাম দিতে চেয়েছিল। আর আমি দাম চেয়েছিলাম এক লাখ ২০ হাজার টাকা করে। অথচ আজ সকালে মাঠে এসে দেখি সব কলা গাছ কেটে কারা নষ্ট করে দিয়েছে।’
কলা চাষির ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংক-এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অনেক কষ্ট করে ভাই ও রহিদুল ইসলাম দুজনে মিলে এ কলা চাষ করেছিল। রাতের অন্ধকারে কারা ফসল কেটে এত বড় ক্ষতি করল জানি না। তাদের ধরে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
আরেক চাষি আহসান হাবিব বলেন, ‘চাষিরা মাঠে যখন ফসল ফলায়, তাদের শরীরের ঘাম ঝরিয়ে ফসল করতে হয়। তখন ফসল আর সন্তানের মধ্যে ফারাক থাকে না।’
স্থানীয় মাঠের কৃষি ব্লক সুপার ভাইজার আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমি মাঠ পরিদর্শনে এসে জানতে পারলাম শাহাজান ভাইয়ের কলা বাগান কেউ কেটে দিয়েছে। ঘটনাস্থলে এসে দেখি সব কলা গাছ কাদিসহ কেটে দিয়েছে। তাতে আনুমানিক ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
উপজেলা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কোনো সহযোগিতা করার মতো থাকলে তা করা হবেও বলে জানান তিনি।
গাংনী থানার ওসি (তদন্ত) মনোজীত কুমার বলেন, ‘বালিয়াঘাট গ্রামে কৃষকের মাঠে থাকা কলা গাছ কেটে দিয়েছে কেউ। আমরা এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।’